ইমাম আবু হানিফা (রহঃ) নামেই যার মিশনের পরিচিতি
May 15 2020, 16:32
লিখেছেন- মাওলানা শাহ মমশাদ আহমদ
ইমাম আবু হানিফা (রহঃ) চার ইমামের শ্রেষ্ঠ ইমাম ,মুল নাম নু’মান বিন ছাবিত, আবু হানিফা উপাধি, এনামেই তিনি প্রসিদ্ধ। আবু হানিফা নামকরণের ব্যাপারে বিভিন্ন বানোয়াট কাহিনী প্রচলিত আছে, আর তা গ্রহন করে অনেক সালাফি নামধারী ভাই কটাক্ষও করে থাকেন,হানাফি মাযহাব নাকি একটি মেয়ের নামে গোড়াপত্তন, অথচ এরুপ অপপ্রচার তাদের জ্ঞানের দৈনতারই বহিঃপ্রকাশ।
আরব প্রচলনে اب যুক্ত উপাধি দু ধরনের হয়, একটি বংশীয় হিসাবে আরেকটি গুন হিসাবে, কারো ছেলের নাম যদি আবদুল্লাহ হয়, তাকে আবু আব্দুল্লাহ ডাকা হয়,ছেলের নাম খালেদ হলে পিতাকে আবু খালিদ ডাকা হয়,তা বংশীয় উপাধি, সন্তানদের মধ্যে বড় সন্তানের নামে পিতাকে নাম দেয়ার প্রচলন আমাদের দেশেও আছে,বড় ছেলের নাম কয়েছ তাই কয়েছের বাপ বলা হয়ে থাকে। দ্বিতীয় اب যুক্ত করে কারো উপাধি দেয়া হয় গুন হিসাবে, তখন اب অর্থ পিতা নয়, ওয়ালা, অত্যাধিক অর্থে,যেমন আরবীতে حليبঅর্থ দুধ,আবুল হালিব মানে দুধওয়ালা,আবু জাহেল মানে মুর্খতার পিতা নয়,অত্যাধিক মুর্খ। প্রথম খলিফা হযরত আবু বাকার রাঃ,মুল নাম আব্দুল্লাহ,আবু বাকার নামে খ্যাত,গুনবাচক উপাধি, বাকার শব্দের শাব্দিক অর্থ সুচনা,অগ্রগামী, এজন্য দিনের সুচনায় ভোর থাকে তাই ভোর বেলাকে বাকার বলে,মৌসুমের প্রথম ফল ও বৃষ্টি কেও বাকার বলা হয়।হযরত আবু বাকার রাঃ দ্বীন ইসলামের সকল কাজের সুচনায় জান মাল ত্যাগ কারী এ জন্য তাকে আবু বাকার বলা হয়।
হানিফা শব্দের অর্থ একনিষ্ঠ, ইমাম আবু হানিফা তাওহিদ, এবাদত এবং ফিকাহ গবেষণায় একনিষ্ঠ ছিলেন,তাই তার গুন বাচক উপাধি আবু হানিফা, অর্থাৎ অত্যাধিক একনিষ্ঠ , এনামেই তিনি খ্যাত। ইসলামের ইতিহাসে এমন দুব্যাক্তি যাদের নামেই তাদের মিশনও সফলতার রহস্য ফুটে উঠে,,একজন হযরত আবু বাকার (রাজিঃ) অপরজন ইমামে আজম আবু হানিফা (রঃ) আবু বাকার শব্দের অর্থ যেভাবে অগ্রগামী, দ্বিনের প্রতি কাজেই তিনি অগ্রগামী ছিলেন, হযরত আলী (রাজিঃ) কে এক ব্যাক্তি জিজ্ঞাসা করল,রাসুলুল্লাহ এর পর উম্মতের সবচেয়ে বড় আলেম কে? তিনি বললেন,আবু বাকার,বলা হল এর প্রমান কি?আলী রাজি; বললেন রাসুল (সঃ) বলেছেন,কোন জামাতের শ্রেষ্ঠ আলেমই ইমাম হওয়ার অধিক হকদার,রাসুলের জীবদ্দশাতেই আবুবাকার (রাজিঃ) ইমামতী করেছেন।
আবার বলা হল উম্মতের মধ্যে দানশীলতায় অগ্রগামী কে,,হযরত আলী বললেন,আবু বাকার,বলা হল এর দলিল কি?আলী (রাজিঃ) বললেন, তাবুকের যুদ্ধের সময় নবীজি সর্বাত্মক সহযোগিতার আহ্বান জানালেন,সকল সাহাবীই নিজ সামর্থ অনুযায়ী সাহায্য করলেন কিন্তু আবু বাকার ঘরের সব আসবাবপত্র নিয়ে হাজির হলেন,রাসুল (সঃ)বললেন,ঘরে কি রেখে এসেছ? আবু বাকার বললেন,ঘরে আল্লাহ- রাসুল কে রেখে এসেছি।
প্রশ্নকারী হযরত আলী কে সর্বশেষ জিজ্ঞাসা করল,,উম্মতের মধ্যে সবচেয়ে শক্তিশালী ব্যাক্তি কে?উপস্থিতির ধারনা ছিল হযরত আলী নিজের কথা বলবেন কিন্তু তিনি বললেন,আবুবাকার রাজিঃ,বলা হল হে আলী এর প্রমান কি? তিনি বললেন, মক্কা বিজয়ের দিন রাসুলুল্লাহ নিজ হাতে কাবা ঘরে রাখা দেবদেবীর মুর্তি ভাংছিলেন কিন্তু একটি মুর্তি উপরে সাজানো ছিল,নবিজীর হাতের নাগালে ছিলনা,আমি নবিজীকে আরজ করলাম,হে আল্লাহর রাসুল,আপনি আমার কাদে উঠুন,নবিজীর মধ্যে চল্লিশজন যুবকের শক্তি ছিল,ক্ষণিকের জন্য আমি নবীজির শরীরের ভার বরদাশত করতে পারিনি,কিন্তু আবুবাকার রাজিঃ হিজরতের সময় রাসুলুল্লাহ কে কাধে উঠিয়ে দু মাইল উপরের গারে সাওরে উঠেছেন।
এঘটনার মাধ্যমেই আমরা আবু বাকার নামের যথার্থতা অনুধাবন করতে পারি।(খুতবাতে মুহাম্মাদ মাক্কী) অপরদিকে আবু হানিফা শব্দের অর্থ একনিষ্ঠ, ইমাম আবু হানিফা দ্বীন- ইসলামের জন্য একনিষ্ঠ থেকেই নিজ জীবন কুরবান করেছেন,কুরআন- হাদীস গবেষনায় একনিষ্ঠ ছিলেন বলেই শ্রেষ্ঠ ইমাম হয়েছেন। প্রতিটি মুহুর্ত দ্বিনী গবেষনায়একনিষ্ঠ থাকতেন বিধায় জীবদ্দশাতেও অপপ্রচারে তীরবিদ্ধ হয়েছেন,কিন্তু কাউকে কিছু বলার সময় হয়নি। ইমাম আবু হানিফার (রঃ)সমসাময়িক প্রখ্যাত আলেম,ফাক্কীহ সুফিয়ান সাওরীকে বলা হল,আবু হানিফা রহঃ সম্পর্কে মন্তব্য করুন,তিনি বললেন তিনি শুধু গ্রহণ করতেন, কাউকে কিছু দিতেন না, উপস্থিত লোকজন বললেন, তিনিতো বিশাল সম্পদশালী ছিলেন,মানুষের মধ্যে বিলিয়ে দিয়েছেন, সুফিয়ান সাওরী হেসে বললেন আমার তা জানা আছে,দানশীলতায় তিনি শ্রেষ্ঠ, কিন্তু জীবনে তিনি কারও গীবত বা পরনিন্দা করেন নি অথচ তার নিন্দা হত সর্বত্র,গীবত বা পরনিন্দাকারী ব্যাক্তি নিজ নেক আমলের সওয়াব যার নিন্দা করেছে তাকে দিয়ে দেয়,এজন্য বলা হয় গীবত যদি করতে হয় নিজ মায়ের গীবত কর যাতে তোমার নেক আমলের প্রতিদান তোমার মা পাবেন,সে হিসাবে দেখা যায় ইমাম আবু হানিফা পরনিন্দাকারীদের আমলের সওয়াব শুধু গ্রহন করেছেন,পরনিন্দা করে নিজ সওয়াব কাউকে দেননি।(সীরাতে ইমামে আ’জম) পরিশেষে বলবো,আবু হানিফা এক ব্যাক্তি নন,দ্বিনী কাজে একনিষ্ঠ একটি মিশনের নাম,একনিষ্ঠতার সাথে যিনিই ইসলামের কাজ করবেনতিনিই হানাফী হবেন। আল্লাহ আমাদের বিষয়টি অনুধাবন করার তাওফিক দিন।
লেখক: মুহাদ্দিস, জামেয়া মাদানিয়া কাজির বাজার সিলেট।