সারা দেশের মাদ্রাসাসমূহ

মাওলানা মুহিব্বুল হক গাছবাড়ির সংক্ষিপ্ত জীবনী

July 06 2020, 05:13

মাওলানা মুফতি মুহিব্বুল হক গাছবাড়ি দামাত বারাকাতুহুম সিলেট তথা বাংলাদেশের নির্বাচিত জ্যুতির্ময় তারকারাজির এক অনন্য নক্ষত্র; যাকে মহান আল্লাহ তায়ালা ইলমি জ্ঞানের পাশাপাশি উলামা মাশায়েখের মধ্যে বিচক্ষণ বুদ্ধি বিবেচনা ও বিচারিক নিপুণ সিদ্ধান্ত প্রদান ক্ষমতার দৌলত দ্বারা গৌরবান্বিত করেছেন।

জন্ম-শিক্ষা- ১৯৪৫ ঈ,৬,ডিসেম্বর বৃহস্পতিবার শাহজাল রাহ,র আধ্যাত্মিক স্মৃতি বিজড়িত, পূণ্যভূমি সিলেট জেলার ও বাহরুল উলূম আল্লামা মুশাহিদ
বায়মপুরীর স্মৃতিধন্য কানাইঘাট উপজেলার ঝিঙ্গাবাড়ি ইউনিয়নের ফখরোচটি গ্রামে এক সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন।
তাঁর পিতা হযরত ইসহাক রাহ ছিলেন সুনামধন্য আলেমে দ্বীন।
ডাকনাইল দক্ষিণ সরকারি বিদ্যালয়ে ৫ বছর প্রাথমিক শিক্ষা সমাপ্ত করে ছাফেলা ১ম বর্ষ থেকে আলিয়া ৪র্থ বর্ষ পর্যন্ত লেখাপড়া করেন নিজ এলাকার সুনামধন্য মাদ্রাসা গাছবাড়ি মাযাহিরুল উলূম কৌমি [আকুনি] মাদ্রাসায়।

অতঃপর ১৯৬৩-৬৪ ঈ, তদানীন্তন সিলেটের শ্রেষ্ঠ প্রতিষ্ঠান দারুল উলুম কানাইঘাটে ভর্তি হয়ে তথায় যুগশ্রেষ্ঠ উস্তাদ মন্ডলির কাছে আলিয়া ৫ম ও ৬ষ্ঠ ২ বছরকাল মুখতাছারুল মাআনি,সুল্লামুল উলূম, মুসল্লামুস সুবুত, তাফসিরে মাদারিক প্রভৃতি কিতাব অত্যন্ত
সুনামের সহিত পড়ালেখা করেন। এরপর ১৯৬৫ ঈ, ছয়মাস ঢাকাউত্তর রানাপিং আরবিয়া হোসাইনিয়া মাদ্রাসায় পড়াশোনা করে বাংলাদেশের শ্রেষ্ঠ কৌমি বিদ্যাপীঠ দারুল উলুম হাটহাজারী মাদ্রাসায় ভর্তি হন।
সেখানে ৪ বছর অবধি উলুমে আরাবিয়ার বিভিন্ন শাস্ত্রে বুৎপত্তি অর্জন করার পাশাপাশি ১৯৬৯ ঈ,দাওরায়ে হাদিস সমাপ্ত করেন।
সমগ্র দেশের শিক্ষার্থীদের সমন্বয়ে অনুষ্ঠিত বার্ষিক পরীক্ষায় সম্মিলিত মেধাতালিকায় ১ম স্থান অধিকার করে বিজয় ছিনিয়ে এনে
সিলেটবাসীর মুখ উজ্জ্বল করেন।
হাটহাজারী মাদ্রাসায় কিতাব প্রতি প্রাপ্য ৫০ নম্বরের মধ্যে সহিহ বুখারী,৪৮, সহিহ মুসলিম,৫১,জামে তিরমিযি,৫০, সুনানে আবু দাউদ,৫২,মুআত্তা মালিক,৫১, মুআত্তা মুহাম্মদ,৪৮, নম্বর অর্জন করে নজিরবিহীন কৃতিত্বের স্বাক্ষর বহন করতে সক্ষম হন।

উস্তাদ মন্ডলি-
তাঁর অন্যতম উস্তাদদের মধ্যে দারুল উলুম কানাইঘাটে,
আল্লামা মুশাহিদ বায়মপুরি,
মাওলানা মুজাম্মিল বায়মপুরি,
মাওলানা শহরুল্লাহ চটি,
মাওলানা শফিকুল হক আকুনি,
মাওলানা ফয়েজুল বারি মহেশপুরি,
ঢাকাউত্তর রানাপিং মাদ্রাসায়,
মাওলানা রিয়াসত আলি চৌঘরি,
মাওলানা তাহির আলী তইপুরি,
দারুল উলুম হাটহাজারীতে,
মাওলানা আব্দুল কাইয়ুম,
মাওলানা আব্দুল আজিজ,
মাওলানা আবুল হাসান,
মাওলানা হামিদ,
মাওলানা মুহাম্মদ আলি,
শায়েখুল ইসলাম মাওলানা আহমদ শফি, প্রমুখ যুগশ্রেষ্ঠ উলামায়ে কেরামের নিকট থেকে ইলমে ওহির সুধা পান করেন।

কর্ম ও কৃতিত্ব: শিক্ষকতা-
শিক্ষাজীবন সমাপ্ত হওয়ার পর ই তাঁর সোনালী কর্মজীবনের সূচনা হয় প্রথমেই১৯৬৯ ঈ, সুনামগঞ্জ দরগাহপুর মাদ্রাসায় শিক্ষকতার মাধ্যমে।
সেখানে তিনি ৪ বছর যাবত দক্ষতা ও সুনামের সহিত হাদিস শাস্ত্রের বিভিন্ন কিতাবাদির অধ্যাপনা করেন। ফলে তিনি দৃষ্টি কাড়তে সক্ষম হন জামেয়া কাসিমুল উলুম দরগাহ মাদ্রাসার সুনামধন্য মুহতামিম আরিফ বিল্লাহ হযরত মাওলানা
আকবর আলি সাহেবের।
আর তাই ইমাম সাহেব হুজুরের আহ্বানে সাড়া দিয়ে ১৯৭৩ সালে জামেয়া কাসিমুল উলুম দরগার শিক্ষক মনোনীত হন। তখন থেকে আজ ২০২০ সাল অবধি ৪৮ বছর যাবত সময় সময় একজন যোগ্যতাসম্পন্ন পারঙ্গম শিক্ষক, মুহাদ্দিস, মুফতি,শায়েখুল হাদিস হিসাবে অবিচ্ছিন্ন খেদমতের দ্বারা নিজ কর্মের উজ্জ্বল সাক্ষর অব্যাহত রেখেছেন।
অবশেষে হযরত মাওলানা আবুল কালাম জাকারিয়া রাহ,র মৃত্যুর পর ২০১৯ সাল থেকে সিলেটের শীর্ষস্থানীয় ইসলামী বিদ্যাপীঠ জামেয়া কাসিমুল উলুম দরগার মুহতামিমের আসন অলংকৃত করেছেন।
ফলে এখন তিনি একাধারে জামেয়ার শাইখুল হাদিস, প্রধান মুফতি ও মুহতামিম হিসাবে গুরুত্বপূর্ণ তিনটি পদে সমাসীন।
বর্তমান এই ফিৎনার যুগে শহরের সেরা মাদ্রাসায় দীর্ঘ সময় অতিবাহিত করতে পারা বস্তুত হযরত গাছবাড়ি হুজুরের অধ্যাপনার পারদর্শিতার পাশাপাশি বিনয়, মার্জিত চরিত্র,নিষ্ঠা ও বিচক্ষণতার প্রমাণ বহন করে নিঃসন্দেহে।

সমাজ-রাজনীতি:
গাছবাড়ি হুজুরের মেধাভান্ডারে মহান আল্লাহ তায়ালা বিচারিক কার্যক্রম সম্পাদনার মহতি দক্ষতা আমানত রেখেছেন।
ফলে নিজ এলাকাসহ বিভিন্ন স্থানের সৃষ্ট নানাবিদ সমস্যা সমাধানে তার ভূমিকা প্রশংসনীয়।
সিলেট জেলার অসংখ্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের মজলিসে শূরার সভাপতিত্বের আসন ছাড়াও বর্তমানে তিনি সিলেটের প্রাচীন শিক্ষাবোর্ড আযাদ দ্বীনী এদারার সিনিয়র সহ-সভাপতি, পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক, সরকার কর্তৃক অনুমোদিত কৌমি মাদ্রাসার কেন্দ্রীয় শিক্ষাবোর্ড আল হাইআতুল উলয়ার মূল কমিটির সদস্য ও পরীক্ষা নিয়ন্ত্রণ কমিটির সদস্য,
আল-হাইআতুল উলিয়ার অধীনে গঠিত ইফতা বোর্ডের সদস্য, হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশ সিলেট জেলার শ্রদ্বাস্পদ ভাপতি,খাদিমুল কুরআন পরিষদের সভাপতি, সিলেট জেলা উলামা কমিটির চেয়ারম্যান, সিলেট জেলা ফতোয়াবোর্ডের চেয়ারম্যান,সহ আরো অনেক দ্বীনী ও
সামাজিক সংগঠন, সংস্থার মূল নেতৃত্বে সমাসীন থেকে ইসলামের ধর্মীয় ও সামাজিক খেদমতে অসামান্য অবদান রেখে যাচ্ছেন।
আযাদ দ্বীনী এদারার নাযিমে তা’মির থাকাকালীন তিরিশ লক্ষ টাকা ব্যয়ে সোবহানিঘাটস্থ ছয়তলা বিশিষ্ট এদারাভবন নির্মাণের কীর্তির অধিকারী তিনি ই।
তাঁর বিচক্ষণতা ও সুবিবেচনায় নানা চড়াই উৎরাই পেরিয়ে তদীয় মুর্শিদে কামিল, সদরে এদারা খলিফায়ে মাদানী, হাফিজ আব্দুল করিম শায়েখে কৌড়িয়া রাহ,র লালিত স্বপ্ন বাস্তবায়নে সক্ষম হয়েছে।
বর্তমানে দরগাহ মাদ্রাসা ছাড়াও তিনি বেশকটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে অবিচ্ছিন্নভাবে অতপ্রোত জড়িত আছেন। তন্মধ্যে গাছবাড়ি মাযাহিরুল উলূম কৌমি মাদ্রাসা আকুনি, জামেয়া আয়েশা সিদ্দিকা রা, দারুল হাদিস জাহানপুর বালিকা মাদ্রাসা, খাইরুল উলুম খাদিমনগর অন্যতম।
এছাড়াও শাহপরান উপশহর জামে মসজিদের প্রতিষ্ঠাতা মুতাওয়াল্লির দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছেন সফলভাবে। এককথায় তিনি তদীয় কর্মগুণে বর্তমানে সিলেট জেলার আলেমদের অবিতর্কিত অবিসংবাদিত আলেম সম্রাট হিসাবে খ্যাতি অর্জন করতে সক্ষম হয়েছেন।
রাজনীতিতে তার সক্রিয়তা না থাকলেও আসলাফ আকাবিরের শতবর্ষী ঐতিহ্যবাহী রাজনৈতিক সংগঠন জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশের কর্মকাণ্ডের প্রতি সর্বদাই সমর্থন অব্যাহত রয়েছে।

আধ্যাত্মিকতা ও তাযকিয়া: কালের বিবর্তনে গাছবাড়ি হুজুর এখন সিলেটের বিভিন্ন মাদ্রাসার অনুষ্ঠানসমূহের বয়ান ও দোয়ার আকর্ষণ।

বুখারি খতমের দোয়া যেন এখন তার অবিচ্ছেদ্য অংশে পরিণত হয়েছে। এক্ষেত্রে তিনি এখন তদীয় মুর্শিদ হযরত শায়েখে কৌড়িয়ার সফল উত্তরসূরি।
সুলুক ও মুজাহাদার ক্ষেত্রে তিনি কুতুবুল আলম শায়খুল ইসলাম সায়্যিদ হোসাইন আহমদ মাদানী রাহ,র বাংলাদেশেস্থ অন্যতম খলিফা হযরত শায়েখে কৌড়িয়ার নিকট বাইআত গ্রহণ করেন। অল্প দিনের মুজাহাদার পর শায়েখে কৌড়িয়া তাঁকে খেলাফতের পদভারে গৌরবান্বিত করেন।
মহান আল্লাহ তায়ালার দরবারে হুজুরের সকল দ্বীনি খেদমাতের মকবুলিয়াত ও হায়াতে তায়্যিবাহ কামনা করি।

Mukhlisur Rahman Rajagonji.

Spread the love