ডক্টর মাওলানা মুশতাক আহমদ দা.বা. এর সংক্ষিপ্ত জীবনী
November 15 2020, 03:45
নাম :- মুশতাক আহমদ
হযরত শায়খ ড. মুশতাক আহমদ (দামাত বারাকাতুম)। যিনি বাংলাদেশের বর্তমান শীর্ষস্থানীয় আলেমগণের মধ্যে অন্যতম। বহু প্রতিভাধর, মেধাবী ও যোগ্যতা সম্পন্ন চিন্তাশীল আলেম হিসেবে সর্বত্র সুপরিচিত। তিনি একই সঙ্গে মুহাদ্দিস, (শাইখুল হাদিস) লেখক, গবেষক, অনুবাদক, সম্পাদক, শিক্ষাবিদ, ইতিহাসবিদ, মুফাসসির, সুবক্তা, তাত্ত্বিক আলোচক, ইমাম ও খতিব, মিডিয়া ব্যক্তিত্ব, একজন সরকারী পদস্থ কর্মকর্তা, আসলাফ ও আকাবিরে দেওবন্দের নন্দিত উত্তরসূরী এবং ছাহিবে নিসবত বুযুর্গ আলিম ।
পিতা : হযরত মাওলানা মুহাম্মাদ মূসা পিতা মৌলভী ওয়াজ উদ্দীন পিতা মৌলভী ওলী মাহমুদ মজুমদার পিতা ইন্দুরী মজুমদার।
জন্ম ও বংশঃ তিনি ০২/১২/১৯৬৭ সালে চাঁদপুর জেলার কচুয়া থানাধীন পনশাহি গ্রামে জন্মগ্রহন করেন। তাঁর পিতা মাওলানা মুহাম্মাদ মূসা (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) ছিলেন সুপ্রসিদ্ধ মুজাহিদ আলিম। বৃটিশ খেদাও আন্দোলনের চিরআপসহীন সৈনিক ছিলেন। পাকিস্তানি শাষক গোষ্টির বিরামহীন কড়াসমালোচকও ছিলেন। তিনি ঐতিহ্যবাহী নারিন্দা আহসানিয়া আলিয়া মাদরাসার অধ্যক্ষ হিসেবে আজীবন কাজ করলেও চিন্তা চেতনার দিক থেকে ছিলেন পাক্কা দেওবন্দী ও দিলকাশা আশিকে শাইখুল ইসলাম মাদানী।
শিরক ও বিদআতের প্রতিরোধ ও নজরিয়ায়ে দেওবন্দিয়্যাতের প্রতিষ্ঠা ছিলো তার আজীবনের সংগ্রাম। এ প্রসঙ্গে তিনি বহু মুনাজারা করেন। পাশাপাশি তৎকালিন সময়ে বাংলা ভাষায় দীনী পুস্তিকা তেমন না থাকায় সহীহ দীন প্রচারের লক্ষ্যে বাংলা ভাষায় বহু পুস্তিকাও রচনা করে গিয়েছেন।
শিক্ষাজীবনঃ
নিজ বাড়ির সবাহী মকতব থেকে হযরত শায়খের শিক্ষাজীবন শুরু হয়। অতঃপর রহিমানগর হাই স্কুলে ৭ম শ্রেণী পর্যন্ত অধ্যয়নের পর তিনি মাদরাসা শিক্ষা আরম্ভ করেন। পিতা হযরত মাওলানা মুহাম্মাদ মূসা তার প্রথম শিক্ষক। সম্মানিত পিতার কাছে ৫ মাস অধ্যয়নের পর তিনি ১৯৭৫ সাল থেকে ঢাকা আশরাফুল উলূম বড়কাটারা মাদরাসায় হযরত শায়খের মামা হযরত মাওলানা ইসহাক সাহেবের তত্তাবধানে ৩ বছর, তারপর ইমদাদুল উলূম ফরিদাবাদ মাদরাসায় আল্লামা নূর হোসাইন কাসেমী সাহেবের তত্তাবধানে ৩ বছর,
তারপর দারুল উলূম মঈনুল ইসলাম হাটহাজারী মাদরাসায় আল্লামা শায়খ আহমদ সাহেবের তত্বাবধানে ৩ বছর অধ্যয়ন করেন। ১৯৮৫ সালে ঢাকা জামিয়া শারইয়্যাহ মালিবাগ মাদরাসা থেকে দাওরা হাদীস সমাপ্ত করত কওমী মাদরাসা বোর্ডের অধীনে কেন্দ্রীয় ‘দাওরা হাদীস’ পরীক্ষায় সমগ্র বাংলাদেশে মেধা তালিকায় ২য় স্থান লাভ করেন। পরবর্তী বছর চলে যান হিন্দুস্থানের উম্মুল মাদারিস দারুল উলূম দেওবন্দ। সেখানে তিনি ‘তাকমীলে হাদিস’ পরীক্ষায় মেধা তালিকায় ২য় স্থান লাভ করেন এবং দারুল উলূম দেওবন্দের মুঈনে মুদাররিস পদের জন্য সাইয়েদ আরশাদ মাদানীর পক্ষ থেকে প্রস্তাব পান।
সরকারী মাদরাসায় পরীক্ষাঃ
হযরত শায়খের মুল পড়াশোনা কওমী মাদরাসায় হলেও তিনি সম্মানিত পিতা ও শিক্ষকমন্ডলীর নির্দেশক্রমে পাশাপাশি সরকারী মাদরাসায় পরীক্ষা চালিয়ে যান। ১৯৮০ সাল থেকে দাখিল, আলিম, ফাযিল ও কামিল পরীক্ষায় অংশ গ্রহনপূর্বক সকল পরীক্ষায় ১ম শ্রেণীতে ট্যালেন্টপুল মার্ক নিয়ে সম্মানের সাথে উত্তীর্ণ হন। ১৯৮৬ সালে কামিল হাদিস পরীক্ষায় তিনি ছিলেন সমগ্র বাংলাদেশে ১ম শ্রেণিতে ৫ম স্থানের অধিকারী।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যায়নঃ
তারপর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ১৯৮৮ সালে স্নাতক ও ১৯৯০ সালে মাস্টার্স ১ম শ্রেনীতে ১ম স্থান লাভ করেন। ১৯৯৫ সালে এম.ফিল প্রথম পর্ব পরীক্ষায় সর্বোচ্চ নাম্বার লাভ করে পি.এইচ.ডি কোর্সে চলে যান। ২০০০ সালে পি.এইচ.ডি গবেষনা সম্পন্ন হলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ডক্টরেট ডিগ্রী প্রদান করা হয়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ৪৩ তম সমাবর্তন অনুষ্ঠানে তৎকালীন প্রেসিডেন্ট বিচারপতি শাহাবুদ্দিন আহমেদ হযরত শায়খকে এওয়ার্ড হস্থান্তর করেন ।
শিক্ষকতাঃ
দারুল উলূম দেওবন্দ থেকে বাংলাদেশে এসে ১৯৮৬ থেকে হযরত শায়খের শিক্ষকতা শুরু হয়। তিনি ১ বছর কুমিল্লা কাসেমুল উলূম মাদরাসায়, তারপর ৩ বছর ঢাকা পীরজঙ্গী শামসুল উলূম মাদরাসায়, তারপর ৭ বছর চৌধুরীপাড়া দারুল কুরআন মাদরাসায় ২ বছর দারুল উলূম রামপুরা মাদরাসায় ইলমে হাদীসের অধ্যাপনা করেন। অতঃপর তেজগাঁও রেলওয়ে জামিয়া ইসলামিয়্যা মাদরাসায় ২০০৪ সাল থেকে ‘শাইখুল হাদিস’ পদে হাদিসের খেদমত করে যাচ্ছেন। বর্তমানে তিনটি মাদরাসা যথা তেজগাও জামেয়া ইসলামিয়্যা মাদরাসা, সোনারগাঁও উলুকান্ধী আশরাফুল উলূম মাদরাসা ও মুহাম্মদপুর ফাতেমাতুজ জাহরা মাদরাসায় শাইখুল হাদিস হিসাবে ইলমে হাদিসের খেদমত করছেন।
গবেষণা ও গ্রন্থনাঃ
হযরত শায়খ বাংলাদেশের কওমি মাদরাসা পড়ুয়া প্রথম আলিম যিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ডক্টরেট ডিগ্রি লাভ করেন এবং ‘ফিকরে দারুল উলূম দেওবন্দ’ এর উপর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে একাধিক সেমিনার করেন। বহু মুল্যবান গ্রন্থ তিনি রচনা করেছেন । তার রচিত গ্রন্থঃ
(১) ‘তাহরীকে দেওবন্দ’ দারুল উলূম দেওবন্দের চিন্তাধারা দর্শন ইতিহাস ঐতিহ্য ও অবদান বিষয়ে বাংলাভাষায় রচিত বস্তুনিষ্ট প্রথম গ্রন্থ যা বহু বছর পর্যন্ত কওমী মাদরাসার নেসাবে পড়ানো হচ্ছে।
(২) ‘শাইখুল ইসলাম সায়্যিদ হুসাইন আহমদ মাদানী’ লন্ডনসহ বিদেশে অবস্থিত বাঙ্গালী পাঠকদের মধ্যে বিপুল সাড়া জাগাতে সক্ষম হয়েছে । এই গ্রন্থ হযরত মাদানীর শিরোনামে হলেও তাতে আকাবিরে দেওবন্দের চিন্তা চেতনা, তাঁদের সামাজিক, রাজনৈতিক, ধর্মীয় সকল দৃষ্টিভঙ্গি, আকাবিরে দেওবন্দের ইংরেজ সাম্রাজ্যবাদ বিরোধী জিহাদ, হযরত শাহ আবদুর আজীজ র. এর দারুল হরব ফতওয়া, সায়্যিদ আহমদ শহীদ রহ. এর মুজাহিদ আন্দোলন, ১৮৫৭ এর মহাবিদ্রোহ, রেশমী রুমাল আন্দোলন, হযরত শায়খুল হিন্দের মাল্টার কারাবাস ও হযরত মাদানীর অভিবক্ত ভারতের দাবী ইত্যাদির উপর বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে। তাছাড়া বাংলা ভাষায় এই গ্রন্থ শাইখুল ইসলাম হযরত মাদানীর চিন্তাধারা জীবন কর্ম ও আকাবিরে দেওবন্দের ইতিহাসের উপর সর্বাপেক্ষা প্রমান্য ও বস্তুনিষ্ঠ গ্রন্থ।
(৩) ‘ইসলামের আদেশ ও নিষেধ’ যা লন্ডন সহ ইউরোপ ও বাংলাদেশের পাঠকদের মাঝে ব্যাপক সাড়া সৃষ্টি করে । লন্ডনে বিনামূল্যে দুইবার বিতরনও করা হয়েছে ।
(৪) সাম্রাজ্যবাদ বিরোধী স্বাধিনতা সংগ্রামে আলিমদের অবদান, যাতে আলিমগণের যুগ যুগ থেকে চলে আসা তাদের আপসহীন সংগ্রামের বর্ণনা প্রমান সহ আলোচিত হয়েছে।
(৫) উলূমুল হাদীস, এই গ্রন্থটি উলূমুল হাদীস বিষয়ে বাংলাভাষায় প্রথম পর্যায়ের কয়েকটি গ্রন্থের একটি। যেখানে অত্যান্ত সাবলিল ভাষায় উলূমুল হাদীস বিষয়ে
(৬) ইসলামের দৃষ্টিতে বিদআত, বইটি বেশ গবেষণা লব্ধ ও প্রামান্য গ্রন্থ হওয়ায় বাংলাভাষী পাঠক মহলে বিপুল সাড়া জাগানো গ্রন্থ হিসাবে পরিচিতি লাভ করে।
(৭) ইসলামের দৃষ্টিতে আইন ও বিচার,
(৮) ওহীর মর্ম ও তাৎপর্য,
(৯) সায়্যিদ আহমদ শহীদ জীবন ও সংগ্রাম,
(১০) আহকামে ইসলাম,
(১১) আখলাকুস সাহাবা,
(১২) যাকাত ও দান সাদাকা,
(১৩) তারবিয়্যাত নামা,
(১৪) ফুয়ূজাতে জমীরী,
(১৫) শবগুযারীর ওযীফা ইত্যাদি শিরোনামে রচিত তাঁর গ্রন্থগুলো বাংলাভাষী পাঠকদের নিকট অন্যতম উপকারী গ্রন্থ হিসেবে পরিচিত। তাছাড়া ইসলামিক ফাউন্ডেশনের বহু মৌলিক বই রচনায় লেখক পরিষদে অংশগ্রহণ করেন। হযরত শায়খ বহু গবেষণা মুলক প্রবন্ধ রচনা করেন এবং বহু সেমিনারে প্রবন্ধ উপস্থাপনের দায়িত্ব পালন করেন।
অনুবাদ ও সম্পাদনাঃ
হযরত শায়খ “ইসলামিক ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ” এর প্রকাশনা কার্যক্রমের আওতায় সহীহ বুখারী ও সহীহ মুসলিম সহ বহু মৌলিক কিতাবের অনুবাদে অংশগ্রহণ করেন। এছাড়া বহু গ্রন্থ অনুবাদ করেন। তার অনুুদিত ও সম্পাদিত গ্রন্থঃ
(১)ইসলামী জীবন (ইসলাম কিয়া হ্যায়: মাওলানা মানজুর নোমানী), বাংলাদেশ লন্ডনসহ ইউরোপের বিভিন্ন দেশে বইটি বিনামূল্যে বিতরন করা হয়।
(২) দারুল উলূম দেওবন্দের ইতিহাস (তারীখে দারুল উলূম দেওবন্দ: সাইয়্যেদ মাহবুব রিজভী),
(৩) (উলামায়ে হিন্দ কা শানদার মাজী, ৩য় খন্ড: সাইয়্যেদ মিয়াঁ),
(৪) ঈমানী গল্প (আহলে দিল কে তড়পাদনে ওয়ালে ওয়াকেয়াত: পীর যুলফিকার আহমদ নকশবন্দী) ইত্যাদি শিরোনামে বহু মূল্যবান গ্রন্থ অনুবাদ করেন।
ইসলামিক ফাউন্ডেশনের সাহিত্য পত্রিকা ‘মাসিক অগ্রপথিক’ ও গবেষণা পত্রিকা ‘ত্রৈমাসিক ইসলামিক ফাউন্ডেশন পত্রিকা’-এর বহু বছর তিঁনি সহযোগী সম্পাদক ছিলেন। বর্তমানে ইফার অনুবাদ বিভাগের সম্পাদ পদে দায়িত্ব্য পালন করে যাচ্ছেন। তাছাড়া বিভিন্ন কিতাবপত্র, স্বরনিকা ও ক্ষুদ্র পুত্রিকাও সম্পাদনা করেছেন।
ইমাম ও খতিবের দায়িত্ব পালনঃ
হযরত শায়খ শিক্ষতার পাশাপাশি মসজিদের ইমামতি করেন। ১৯৮৭ থেকে ১৯৯৭ পর্যন্ত খিলগাঁও গভঃ স্টাফ কোয়ার্টার জামে মসজিদে ইমামতি করেন। ইমামতি করা কালে সেখানে মসজিদের জন্য জমি বরাদ্দ নেওয়া, অতঃপর সুদর্শন দোতালা ভবন নির্মাণ, সকাল-দুপুর মকতব ও ঈদগাহ প্রতিষ্ঠা করেন। ১৯৯৭ সালের মধ্যবছর থেকে তেজগাঁও রেলওয়ে স্টেশন জামে মসজিদে ‘জুমুআর খতীব’এর দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছেন। খতীবের দায়িত্ব পালন করার সাথে মাদরাসা ও মসজিদের অসমাপ্ত ভবন নির্মান, হাফেজিয়া মাদরাসাকে পূর্ণাঙ্গ দাওরায়ে হাদীস মাদরাসায় রূপদান, মাদরাসার সমৃদ্ধ কুতুবখানা প্রতিষ্ঠা ও মাদরাসা কেন্দ্রিক ঈদগাহ পরিচালনার সুব্যবস্থা করেন।
পাশাপাশি হযরত শায়খ ১৯৯৫ সাল থেকে ইসলামিক ফাউন্ডেশনে জোহর ও আসর নামাযের অস্থায়ী ইমামেরও দায়িত্ব পালন করে আসছেন।
ওয়াজ নসিহত ও তাফসির মাহফিলঃ
হযরত শায়খ ১৯৮৭ সাল থেকে বিভিন্ন মসজিদে তাফসীরুল কুরআনের মজলিস কায়েম করে আসছেন। এর মধ্যে খিলগাও স্টাফ কোয়ার্টার মসজিদ, তেজগাঁও স্টেশন মসজিদ, তেজকুনী পাড়া মসজিদ, ও বারোঘর টোলা মসজিদে বিভিন্ন সময়ে কয়েক বছর তাফসীর মজলিস করেছেন। বর্তমানে দেশের বিভিন্ন স্থানে বছর ব্যাপী তাফসীর মাহফিল করে আসছেন। হযরত শায়খের সুবক্তব্য ও তাত্ত্বিক আলোচনার বিশাল খ্যাতি রয়েছে। সাধারণ থেকে রাষ্ট্রিয় পর্যায়ের বিভিন্ন ময়দানে হযরত শায়খ তাত্ত্বিক আলোচনা ও জ্ঞানগর্ভ বক্তব্য রাখেন।
মিডিয়া আলোচকঃ
একবিংশ শতাব্দীতে ইলেক্ট্রনিক মিডিয়া হল একটি অত্যাধিক গুরুত্বপুর্ন প্রচার মাধ্যম। সারা দুনিয়া এই মিডিয়ার মাধ্যমেই নিয়ন্ত্রিত হয়। তাই মিডিয়ায় দীন প্রচারের গুরুত্ব অধিক। এই গুরুত্বকে অনুধাবন করে হযরত শায়খ সেই ১৯৯১ সাল থেকে বাংলাদেশ টেলিভিশনে ইসলামী প্রোগ্রামে অংশগ্রহণ করতে শুরু করেন। মাঝে কিছু সময়ে মুরব্বিদের নির্দেশক্রমে টেলিভিশন প্রোগ্রাম বন্ধ থাকে। বর্তমানে আবার নিয়মিত প্রোগ্রামে অংশগ্রহন করে আসছেন।
এবিষয়ে হযরত শায়খ বলেন যারা টেলিভিশন দেখে অভ্যস্থ অথবা যারা নিয়মিত টেলিভিশন দেখে থাকে তাদের জন্য আমাদের এই প্রোগ্রাম। সুতরাং যারা দেখে না তাদেরকে টেলিভিশন প্রোগ্রাম দেখার জন্য আহ্বান করা বা এর প্রচার করা সঠিক কোন কাজ নয়। মানুষকে আহলে ইলমের সাথে যুক্ত করাই হল সঠিক কাজ।
দীনী মাদরাসা প্রতিষ্ঠা ও পরিচালনাঃ
হযরত শায়খ বিগত ২০০৮ সাল থেকে ঢাকার উত্তরখান কাঁচকুরায় আপাতত দেড় বিঘা জমির উপর এক সুবিশাল কর্মসুচী হাতে নিয়ে দীনী তালীম ও তারবিয়্যাতের কাজ শুরু করেন। তিনি নিজ দাদা পীর, দাওয়াত ও তাবলীগ জামাআতের সম্মানিত মুরব্বী হযরত শায়খ যাকারিয়্যা রাহমাতুল্লাহি আলাইহির নাম অনুসারে গোটা প্রজেক্টের নাম দিয়েছেন ‘জামিয়া শায়খ যাকারিয়্যা কমপ্লেক্স। বর্তমানে এখানে মকতব, হিফযখানা, কিতাব খানা,(কাফিয়া পর্যন্ত) ইফতা বিভাগ ও উলূমুল হাদীস বিভাগের পড়াশোনা চলছে। মহান আল্লাহ এই সুবিশাল কর্মসুচীকে কবুল করুন। আমীন।
বালিকা মাদরাসা প্রতিষ্ঠাঃ
ইসলামী শরীয়াতে মা বোনদের দীনী তালিম-তারবিয়্যাতের প্রয়োজনিয়তা খুবই গুরুত্ব বহন করে। দীনদার মা বোনদের কারনেই ইসলাম পেয়েছে বহু মনীষার উপহার। সেই মা বোন গড়ে তোলা এখন মুসলিম উম্মাহর এক বড় চ্যালেঞ্জ। শতাব্দীর চ্যালেঞ্জ মোবাকাবেলার লক্ষ্যে প্রয়োজনিয় দীনী শিক্ষার পাশাপাশি জাগতিক শিক্ষার গুরুত্ব অনুধাবন করে হযরত শায়খ ২০১৫ সালে সায়্যিদা আয়েশা সিদ্দিকা বালিকা মাদরাসা নামে দীনী তালীম-তারবিয়্যাতের কাজ শুরু করেন। বর্তমানে প্রতিষ্ঠানটি আপন লক্ষ্যে অল্প অল্প করে অগ্রসর হচ্ছে। মহান আল্লাহ এই সুবিশাল চ্যালেঞ্জকে মোকাবেলায় সফলতা দান করুন। আমীন।
সরকারী পদস্থ কর্মকর্তাঃ
১৯৯৫ সাল থেকে তিনি গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের ধর্ম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন ‘ইসলামিক ফাউন্ডেশন’ এর একজন পদস্থ কর্মকর্তা। বর্তমানে তিনি ‘ডেপুটি ডিরেক্টর’ পদে দায়িত্ব পালন করছেন।
তারবিয়্যাত লাভ ও রূহানিয়্যাত চর্চাঃ
হযরত শায়খ ইলমে তাসাউফে অন্যতম প্রাজ্ঞ ও শাস্ত্রীয় ব্যক্তিত্ব; যিনি আমাদের আকাবির তথা সায়্যিদুত তায়িফা হযরত হাজী ইমদাদুল্লাহ ফারূকী মুহাজিরে মক্কী, ফকীহুন নাফস হযরত রশীদ আহমদ গাঙ্গুহী, হুজ্জাতুল ইসলাম হযরত কাসিম নানুতবী, হাকীমুল উম্মত হযরত আশরাফ আলী থানবী, শাইখুল ইসলাম হযরত হুসাইন আহমদ মাদানী, মুবালীগে ইসলাম হযরত মাওলানা ইলিয়াস দেহলবী ও মাহবুবুল আকাবির হযরত শায়খ যাকারিয়্যা কান্ধলবী মুহাজিরে মাদানী রাহিমাহুমুল্লাহ এর রূহানিয়্যত চর্চা, তাদের উলুম ও মাআরিফ এবং উসুলে ইসলাহে নাফস ও আনওয়ারাতে কালবীর অন্যতম ভাবশিষ্যও বটে। বর্তমান আলিম ওলামাসহ দেশের বহু সত্যসন্ধানী সালিক ও মুরিদ তার কাছে ‘আকাবিরে দেওবন্দ’ ও ‘সালাসিলে আরবাআর’ বরকতময় তরীকায় রূহানী দীক্ষা ও তরবিয়্যাত লাভ করে যাচ্ছে ।
পীরানে পীর শায়খুল মাশায়েখ, কুতবুল আলম ‘শাহ জমির উদ্দিন নানুপুরী’ (রহমাতুল্লাহি আলাইহি), তাবলিগ জামাআতের মুরব্বি হযরত শায়খ যাকারিয়্যাহ রহমাতুল্লাহি আলাইহি এর আজাল্লে খলিফা শাইখুল আরব ওয়াল আজম ‘মালিক শাহ আবদুল হাফিয আল মাক্কী’ ( রহমতুল্লাহি আলাইহি) ও হযরত হাফেজ্জী হুজুরের আজাল্লে খলিফা ‘হযরত আল্লামা সুলাইমান নুমানী’ (দামাত বারাকাতুহুম) এর সাথে তার আধ্যাত্মিক সম্পর্ক। তাদের প্রত্যেকেই হযরত শায়খকে তরীকত ও ইসলাহে নফসের কাজ করার জন্য ইজাজত ও খিলাফত প্রদান করে ধন্য করেছেন।
ইসলাহী কার্যক্রমঃ
উম্মাহর ইসলাহী ও আধ্যাত্মিক উন্নতি সাধনের লক্ষ্যে হযরত শায়খ নিয়মিত ইসলাহী কর্মসূচী করে আসছেন। সেই লক্ষ্যে হযরত শায়খ ইংরেজি মাসের ১ম শুক্রবার জামিয়া শায়খ যাকারিয়্যা কমপ্লেক্সে এবং মাসের ২য় শুক্রবার তেজগাঁও রেলওয়ে জামে মসজিদ কমপ্লেক্সে নিয়মিত ইসলাহী মাহফিল ও শবগুজারী করে আসছেন। তাছাড়াও দেশের বিভিন্নপ্রান্তে হযরত শায়খ ইসলাহী মাহফিল ও শবগুজারীর আমল করে আসছেন।
প্রিয় উস্তাযগণঃ
হযরতের প্রিয় শিক্ষকমন্ডলী যাঁদের অন্তরঙ্গ স্নেহ ও রাহনুমায়ী নিয়ে তিনি পড়াশোনার অঙ্গনে লালিত হন তাঁদের মধ্যে অন্যতম ছিলেন
(ঢাকাতে) – হযরতের পিতা মাওলান মুহাম্মাদ মূসা, হযরতের মামা মাওলানা মুহাম্মাদ ইসহাক, আল্লামা নূর হোসাইন কাসেমী, আল্লামা ফরীদ উদ্দীন মাসঊদ, আল্লামা উবায়দুল্লাহ ফারুক, আল্লামা মুহাদ্দিস আবদুল হাফীজ (ফরিদাবাদ), আল্লামা সুলাইমান নুমানী, আল্লামা মুফতি গোলাম মুস্তফা, আল্লামা মুফতী আবদুল হান্নান, আল্লামা কাজী মু‘তাসিম বিল্লাহ,
(হাটহাজারীতে) – আল্লামা শায়খ আহমদ, আল্লামা মুহাম্মদ কাসেম, আল্লামা আহমদুল হক, আল্লামা আহমদ শফী,
(দেওবন্দে) – আল্লামা সায়্যিদ আরশাদ মাদানী, আল্লামা মুফতি সাঈদ আহমদ পালনপুরী, আল্লামা আবদুল হক শায়খে ছানী, আল্লামা নাসীর আহমদ খান, আল্লামা ক্বমারউদ্দীন প্রমুখ।
মহান রাব্বুল আলামীন সকলের রফয়ে দারাজাত বুলন্দ করেদিন, আমীন।
ব্যক্তিগত জীবনে তিনি দুই পুত্র এবং এক কন্যা সন্তানের পিতা। তাছাড়া অসংখ্য গুণগ্রাহীর কাছে তিনি স্নেহাষ্পদ ছাত্র কিংবা প্রিয়বন্ধু কিংবা সম্মানিত উস্তাদ ও পীর বা আন্তরিক হিতাকাংখী মুরব্বী।
তথ্য দানকারী :-আন-নুরবিডি.কম