আযহার আলী আনোয়ার শাহ রহ. এর সংক্ষিপ্ত জীবনী
March 14 2021, 09:22
বাংলাদেশি দেওবন্দি ইসলামি স্কলার আল্লামা আযহার আলী আনোয়ার শাহ ( ১৯৪৭ — ২০২০ ) ছিলেন একজন বাংলাদেশি ইসলামি পণ্ডিত, হানাফি সুন্নি আলেম, শিক্ষাবিদ ও ধর্মীয় আলোচক। তিনি আল জামিয়াতুল ইমদাদিয়া কিশোরগঞ্জের আচার্য, বেফাকুল মাদারিসিল আরাবিয়া বাংলাদেশের সহ-সভাপতি ও আল হাইআতুল উলয়ারও সহ-সভাপতি ছিলেন। এছাড়াও তিনি কয়েকটি সংস্থার প্রতিষ্ঠাতা ও সভাপতি ছিলেন। তিনি “ শাহ সাহেব ” নামেই অধিক পরিচিত ছিলেন।
এবং কিশোরগঞ্জের “বাবা হুজুর” নামেও বেশ পরিচিত ছিলেন।
আল্লামা আযহার আলী আনোয়ার শাহ রহ. মুহতামিম, আল জামিয়াতুল ইমদাদিয়া কিশোরগঞ্জ।
তিনার পূর্বসূরী ছিলেন আহমদ আলী খান। আর উত্তরসূরী হলো, শেখ শাব্বির আহমাদ রশিদ দা.বা.
সদস্য, আল হাইআতুল উলয়া।
সহ-সভাপতি, বেফাকুল মাদারিসিল আরাবিয়া বাংলাদেশ।
ব্যক্তিগত তথ্য:
জন্ম: ২ জানুয়ারী ১৯৪৭ ঈসায়ী
শহীদি মসজিদ সংলগ্ন পৈতৃক বাসা, কিশোরগঞ্জ
মৃত্য: ২৯ জানুয়ারী ২০২০ ঈসায়ী
ইবনে সিনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, ঢাকা
সমাধিস্থল: বাগে জান্নাত, পারিবারিক কবরস্থান, শোলাকিয়া, কিশোরগঞ্জ।
ধর্ম: ইসলাম
জাতীয়তা: বাংলাদেশী
সন্তান:
১. হাফেজ তাসনীম (বড় ছেলে)
২. আনজার শাহ তানিম (ছোট ছেলে)
পিতা: আতহার আলী রহ.
প্রধান আগ্রহ: আধ্যাত্মিকতা , লেখালেখি, ওয়াজ-নসীহত, সমাজ সংস্কার, কুরআন তেলওয়াত।
যাদের দ্বারা সোহবত প্রাপ্ত:
আতহার আলী রহ. (বাবা)
আবরারুল হক হক্কী
শাহ আহমদ শফী
মুহাম্মদ ইউসুফ বান্নুরি
আবদুল্লাহ দরখাস্তি
জন্ম ও বংশ:
আযহার আলী আনোয়ার শাহ রহ. ১৯৪৭ সালের ২ জানুয়ারি কিশােরগঞ্জের শহীদি মসজিদ সংলগ্ন পৈতৃক বাসায় জন্মগ্রহণ করেন । তার পিতার নাম আতহার আলী, তিনি নেজামে ইসলামী পার্টির প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি ও পূর্ব বাংলা আইনসভার সদস্য ছিলেন।
শিক্ষাজীবন :
তিনি স্বীয় পিতার কাছে শিক্ষাজীবনের সূচনা করেন। পিতার খলিফা নিছার আলীর কাছে ধর্মীয় এবং মাস্টার আব্দুর রশীদের কাছে সাধারণ বিষয়ের প্রাথমিক শিক্ষা লাভ করেন। ১৯৬১ সালে তার পিতার প্রতিষ্ঠিত আল জামিয়াতুল ইমদাদিয়ায় হাফেজ নূরুল ইসলামের তত্ত্বাবধানে কুরআনের হেফজ শেষ করেন।
একই প্রতিষ্ঠানে ১৯৬৪ সালে আব্দুল হক কাসেমির তত্ত্বাবধানে মাধ্যমিক শিক্ষা সমাপ্ত করেন। তারপর পিতার নির্দেশে তিনি পাকিস্তানের করাচিতে চলে যান। সেখানের বিখ্যাত বিদ্যাপীঠ জামিয়া উলুমুল ইসলামিয়ায় ভর্তি হন। সেখানে তিনি ১৯৬৭ সাল পর্যন্ত লেখাপড়া করেন । ১৯৬৭ সালে বেফাকুল মাদারিসিল আরাবিয়া পাকিস্তানের অধীনে কেন্দ্রীয় দাওরায়ে হাদীস ( মাস্টার্স ) পরীক্ষায় প্রথম বিভাগে উত্তীর্ণ হন। তাঁর শিক্ষকদের মধ্যে রয়েছে : মুহাম্মদ ইউসুফ বান্নুরি, ওয়ালী হাসান টুকী, মুহাম্মদ ইদরিস মিরাঠী, আব্দুল্লাহ দরখাস্তী সহ প্রমুখ বিখ্যাত ব্যক্তিবর্গ।
এছাড়া ১৯৬৬ সালে মিশর থেকে পাকিস্তানে আগত আতা সােলাইমান রিযক্ব আল মিশরী ও ইবরাহীম আব্দুল্লাহর কাছে তিনি কুরআনের ক্বেরাতের উপর উচ্চতর প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেন।
কর্মজীবন:
শিক্ষাজীবন সমাপ্তির পর ১৯৬৮ সালে তিনি আল জামিয়াতুল ইমদাদিয়ায় শিক্ষক হিসেবে যােগদান করেন । স্বাধীনতা পরবর্তী দুর্যোগকালে মাদ্রাসা বন্ধ হয়ে গেলে তিনি কিছুদিন ব্যবসা করেন। ১৯৭৫ — ৭৬ সালে জামিয়া ইসলামিয়া মােমেনশাহীতে শিক্ষাসচিবের দায়িত্ব পালন করেন । ১৯৭৭ সালে পুনরায় আল জামিয়াতুল ইমদাদিয়ায় যোগদান করেন। ১৯৭৯ সালে অত্র জামিয়ার সহকারী পরিচালক নিযুক্ত হন। ১৯৮৩ সালে মুহতামিম পদে উন্নীত হয়ে মৃত্যু অবধি এই দায়িত্বে ছিলেন।
এর পাশাপাশি তিনি শহীদি মসজিদের মুতাওয়াল্লী , ইমাম ও খতীবের দায়িত্ব পালন করেন । তিনি নুরুল উলুম কুলিয়ার চর মাদ্রাসা ও জামিয়া ইসলামিয়া গাইলকাটা মাদ্রাসার ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ হিসেবেও দীর্ঘদিন দায়িত্ব পালন করেন । সেই সাথে তিনি পটিয়া মাদ্রাসা , ভাস্করখিল মাদ্রাসা , আব্দুলাহপুর মাদ্রাসা , বারইগ্রাম মাদ্রাসা , ইসলামপুর মাদ্রাসাসহ বহু মাদ্রাসার মজলিশে শুরার সদস্য ছিলেন।
তিনি বেফাকুল মাদারিসিল আরাবিয়া বাংলাদেশের সহ-সভাপতি , আল হাইআতুল উলয়া লিল জামিআতিল কওমিয়া বাংলাদেশেরও সহ-সভাপতি , তানযীমুল মাদারিস ( আঞ্চলিক কওমি মাদ্রাসা শিক্ষা বাের্ড ) বৃহত্তর মােমেনশাহীর প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি , কিশােরগঞ্জ ইমাম ও উলামা পরিষদের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি , দাওয়াতুল হক কিশােরগঞ্জ ও দাওয়াতুল কোরআন সংস্থার প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।
তাসাউফ:
তিনি আশরাফ আলী থানভীর খলীফা আবরারুল হক হক্কীর নিকট বায়’আত গ্রহণ করেন । ২০০৪ সালে তার কাছ থেকে খেলাফত লাভ করেন।
এছাড়াও তিনি যাদের কাছে খেলাফত পেয়েছেন :
জাফর আহমদ উসমানীর খলীফা খাজা শামছুল হক, কিশোরগঞ্জ।
আতহার আলির খলীফা আব্দুল মান্নান, সিলেট।
আব্দুল ওয়াহহাবের খলীফা ফয়জুর রহমান, মােমেনশাহী।
আসআদ মাদানির খলীফা এহসানুল হক সন্দ্বীপি, চট্টগ্রাম।
প্রকাশনা :
তার প্রকাশিত গ্রন্থাবলির মধ্যে রয়েছে :
১. তথাকথিত আহলে হাদীস ফিতনার জবাব
২. কিছু বিক্ষিপ্ত কথা
৩. খুতবাতে শায়খ আনোয়ার শাহ
৪. সমকালীন সমস্যাবলির শরয়ী সমাধান
৫. স্মৃতির আয়নায় প্রিয় মুখ
ভ্রমণ:
তিনি ১৯৭৬ ও ২০০০ সালে দুইবার হজ্জ পালন করেন। ১৯৮১ সালে মালয়েশিয়া , ইন্দোনেশিয়া ও সিঙ্গাপুরে শিক্ষা সফর করেন । ১৯৮৭ সালে ইরাকের তৎকালীন ধর্মমন্ত্রীর দাওয়াতে তিনি ইরাক সফর করেছিলেন । ১৯৯৪ সালে আবরারুল হক হক্কীর সান্নিধ্যে লাভের জন্য ভারত সফর করেছিলেন। ২০০০ সালে সংযুক্ত আরব আমিরাত ও ২০০৩ সালে শাহ হাকীম আখতারের ছেলে মাযহারের দাওয়াতে তিনি পাকিস্তান সফর করেছিলেন।
মৃত্যু ও উত্তরাধিকার:
আযহার আলী আনোয়ার শাহ’র কবর
তিনি ২০২০ সালের ২৯ জানুয়ারি বার্ধক্যজনিত কারণে ইবনে সিনা হাসপাতাল, ঢাকায় চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুবরণ করেন। পরদিন শোলাকিয়া ঈদগাহ ময়দানে তার জানাযার নামাজ অনুষ্ঠিত হয়। জানাযায় ইমামতি করেন তার ছোট ছেলে আনজার শাহ তানিম। তার জানাযায় প্রায় ৫ লক্ষ লোক অংশগ্রহণ করে। জানাযা শেষে শোলাকিয়াস্থ বাগে জান্নাত কবরস্থানে তাকে দাফন করা হয়। তার মৃত্যুতে দেশের রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রী সহ অনেক নেতৃস্থানীয় ব্যক্তিবর্গ শোক প্রকাশ করেছেন।
আশিক আশরাফ কর্তৃক “শাহনামা” নামে তার সাক্ষাৎকারমূলক জীবনীগ্রন্থ রচিত হয়েছে।
তথ্য প্রদান করেন:
মাওঃ নাজমুল হাসান সাকিব
স্থায়ী ঠিকানা: বাজিতপুর কিশোরগঞ্জ।
শিক্ষার্থী: ইসলামিক রিসার্চ সেন্টার বাংলাদেশ, বসুন্ধরা, ঢাকা।
মোবাইল: ০১৭৩৯-৬৯১৮৭৫