মাও. শাহ্ আবদুল কাইয়ূম রহ. এর সংক্ষিপ্ত জীবনী
June 24 2020, 05:26
পেয়ারে হাবীব মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হলেন শেষ নবী ও শ্রেষ্ঠ রাসূল। তাঁর পরে আর কোন নবী নেই, আর কোন নবী আসবেন না। তাই আল্লাহ তা‘আল নায়েবে নবী তথা আলিমগণ তৈরি করেছেন। যারা জানমাল সব কুরবানি করে ইসলাম হেফাজত করেছেন এবং মানুষের দুয়ারে দুয়ারে গিয়ে হকের দাওয়াত পৌঁছিয়েছেন। যার বদৌলতে আজ আমরা কোন ধরণের পরিবর্তন ছাড়া ইসলাম পেয়েছি। এ যুগে সে যুগের বুযুর্গ আলিমে দ্বীন হযরত মাওলানা শাহ্ আবদুল কাইয়ূম রহ. সে মহান আলিমদের অন্যতম, সে সোনালী কাফেলার সঙ্গী।
জন্ম; তিনি ১২ চৈত্র, ১৩৩৬ বাংলা, রোজ রবিবার, ছুবহে ছাদিকের সময় সিলেট জেলার ওসমানীনগর উপজেলার আওতাধীন আওরঙ্গপুর, (শেরপুরে) অবস্থিত তাজপুর গ্রামের ঐতিহ্যবাহী শাহ্ বংশের এক সম্ভ্রান্ত পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন।
নসবনামা; শাহ্ আবদুল কাইয়ূম বিন শাহ্ ইউনুস বিন শাহ্ শমশের বিন শাহ্ তাহের রাহমাতুল্লাহি আলাইহিম। তাঁর পিতা শাহ ইউনুস রহ. এলাকার সর্বজন শ্রদ্ধেয় মুন্সী হিসাবে পরিচিত ছিলেন। বিভিন্ন মসজিদ ও মক্তবের প্রতিষ্ঠাতা ও শিক্ষক ছিলেন। মায়ের নাম খাদিজা বেগম। তিনি ছিলেন পর্দানিশীন বুযুর্গ একজন মহিলা।
পড়ালেখা; প্রথমে তিনি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পঞ্চম শ্রেণী পর্যন্ত লেখাপড়া করেন। তারপর তাঁর বাবা তাঁকে মাদরাসায় ভর্তি করে দেন। কারণ তিনি পুক্তা ইরাদা করে রেখেছিলে যে, আপন সন্তানকে আলিম বানাবেন।
তো এলাকায় কোন মাদরাসা না থাকায় ব্যক্তিগতভাবে ক্বারী সাহেবানের কাছে কোরআন তেলাওয়াত শিখেন। এরপর বড় সৈয়দপুর জামিয়ায়, বালাগঞ্জের ভঙ্গপুর মাদরাসায় ও মৌলভীবাজারের দারুল উলূম জামিয়ায় পড়ালেখা করেন। ইলম তলবের নিয়তে, দ্বীন হাছিলের মাকছাদে শেরপুর থেকে সুদূর মৌলভীবাজার পায়ে হেঁটে যাওয়া-আসা করেছেন। তারপর ভর্তি হন প্রসিদ্ধ রনাপিং মাদরাসায়। হযরত মাওলানা রিয়াছত আলী চখরিয়ার হুজুর রহ.-সহ দেশবিখ্যাত উলামায়ে কেরাম থেকে খুব সুনামের সাথে ইলম হাছিল করেন। তাঁর খুব ভালো সহপাঠী যারা পরবর্তীতে হয়েছিলেন দেশ-বিখ্যাত শায়খুল হাদীছ তিনি তাদেরকে পিছনে ফেলে ইমতেহানে নাম্বার আউয়ালে কামিয়াব হতেন। রানাপিং মাদরাসায় ফজীলত ছানী (মিশকাত) জামাত পর্যন্ত পড়ালেখা করে চলে যান বহু দিনের কাঙ্ক্ষিত বিশ্ববিখ্যাত দ্বীনী প্রতিষ্ঠান আজহারুল হিন্দ দারুল উলূম দেওবন্দ মাদরাসায়। সেখানে তাকমীল ফিল হাদীছ সমাপ্ত করেন। দেওবন্দে দুনিয়া-খ্যাত ও যুগশ্রেষ্ঠ উলামায়ে উম্মতের কাছ থেকে ইস্তেফাদাহ গ্রহণ করেন। শাইখুল আরব ওয়াল আজম হুসাইন আহমদ মাদানী রহ.-এর কাছে প্রায় তিন মাস ছহীহ বুখারী পড়ার সৌভাগ্য অর্জন করেন। হযরত মাদানী রহ.-র ইন্তেকালের পর শাইখুল হাদীছ হযরত মাও. ফখরুল ইসলাম মুরাদাবাদী রহ.-এর কাছে ছহীহ বুখারী পড়েন। এমনি শাইখুল আদব হযরত মাওলানা ইযায আলী রহ.-এর কাছ থেকে ইলম হাছিল করেন। তাকমীল ফিল হাদীছ সমাপ্ত করে আধ্যাত্মিকতায় ফেদায়ে মিল্লাত হযরত মাওলানা আসআদ মাদানী রহ.-এর নিকট বয়াত হন। এমনি এক ক্বারী সাহেবের কাছে ইলমুল কেরাতের উপর তাখাচ্ছুছ-বিশেষজ্ঞতা অর্জন করেন।
বাবার সেবা; তাঁর হামসবকির অনেকেই ছিলেন দেশ-বিখ্যাত বুযুর্গ ও সুনামধন্য শাইখুল হাদীছ যেমন হযরত মাওলানা মুফতী নূরুল্লাহ সাহেব রহ. বিবাড়িয়া, হযরত মাওলানা কুতুবুদ্দীন সাহেব রহ., হযরত মাওলানা আকবর আলী সাহেব রহ., সাবেক সংসদ সদস্য হযরত মাওলানা উবায়দুল হক্ব রহ. এবং হযরত মাওলানা মাসউদ আহমদ সাহেব দা. বা. শায়খে বাঘা। তিনিও হতে পারতেন তাদের মত বা তাদের চেয়ে আরো বিখ্যাত। কিন্তু বাবার সেবার জন্য সব কিছু করেছিলেন কোরবানি, আল্লাহ তাঁর কোরবানি কবুল করুন।
খেদমত; বাড়ীতে ফিরে আওরঙ্গপুর শেরপুর মাদরাসায় খেদমত ও তাজপুর জামে মসজিদে ইমামতির দায়িত্ব গ্রহণ করেন। সুনামের সাথে উভয় দায়িত্ব আঞ্জাম দিতে লাগলেন। কিন্তু সারা এলাকায় শিরিক, বেদআত ও নাফরমানী মারাত্মক আকার ধারণ করেছে। ভণ্ড ও বেদআতীরা সাধারণ মানুষের দ্বীন-দুনিয়া ধ্বংস করে দিচ্ছে। তাই মাওলানা সাহেব দাওয়াতের ময়দানে নামলেন, মানুষকে হেদায়াতের পথে ডাকতে লাগলেন। তাদের কাছে পৌঁছাতে লাগলেন তৌহীদের বাণী ও ঈমানের পয়গাম, বুঝাতে লাগলেন বেদয়াতের পরিণতি ও সুন্নাহের পুরস্কার। দাওয়াতের ময়দানে তিনি বড় দরদ-শফকত ও হিকমত-প্রজ্ঞার সাথে কাজ করেন। ফলে অল্প দিনে সারা এলাকায় ও নিজ গ্রামে বিপুল সাড়া পড়ে। মানুষ হক বুঝতে পেরে মাজারপূজা ও পীরপূজা ছেড়ে খাঁটি ঈমানের রাহে দলে দলে ফিরে আসে। বেদয়াতের অন্ধকার থেকে বের হয়ে সুন্নাহের আলো আলোকিত হয়। দাওয়াতের এ মহান কাজ আঞ্জাম দিতে গিয়ে মাওলানা সাহেব বাতিলের সাথে অনেক মোকাবেলা করেন এবং তাদের জুলুম-নির্যাতন সহ্য করতে হয়। এমনকি জীবন বাজি রেখে উলামায়ে সূ ও বেদআতীর সাথে বাহাস-মুবাহাসা করেন। আলহামদু-লিল্লাহ আল্লাহ তা‘আলা তাঁকে সব লড়াইয়ে ফতেহ দান করেছিলেন। এভাবে দশ বছর চলল, তখন বেদআতীরা দেখলো মাওলানা সাহেবের দাওয়াতে কিয়াম-মিলাদের অস্তিত্বই হারিয়ে যাচ্ছে। তাই তাঁকে ‘ইমাম সাহেব সবার’ বলে কিয়াম করার দরখাস্ত দেয়। তিনি মুখের উপর এ প্রস্তাব প্রত্যাখান করে নিজ থেকে ইমামতি ছেড়ে দেন। তারপর থেকে শেরপুর নতুন বাজার জামে মসজিদে খুব সম্মান ও প্রতাপের সাথে বয়োবৃদ্ধ হওয়া পর্যন্ত ইমামতি করেন। মসজিদকে তিলে তিলে গড়ে তুলেন। মসজিদকে কেন্দ্র করে সারা এলাকায় দাওয়াতের বিশাল কাজ পরিচালনা করেন।
এমনি আওরঙ্গপুর মাদরাসায় দীর্ঘ দিন পর্যন্ত তালিবুল ইলমদেরকে তালীম ও তারবিয়াতের খেদমত করেন। পরে মাদরাসা-ওয়ালাদের কাছে জামাত বাড়ানোর প্রস্তাব রাখেন। কিন্তু ‘হ্যাঁসূচক’ জবাব না পাওয়ায় মাদরাসা থেকে বিদায় নিয়ে আপন গ্রামে মাদরাসা করেন। অল্প দিনেই সারা বিভাগে তার সুনাম ছড়িয়ে পরে। মাদরাসায় ছাত্রদের সংখ্যা কল্পনাতীতভাবে বাড়তে থাকে। পরবর্তীতে ১৯৭১সালে স্বাধীনতা সংগ্রাম লাগায় সারা দেশের মাদরাসার মত মাদরাসাটিও আপাতত বন্ধ হয়ে যায়। দেশ শান্ত হওয়ার পর আবার মাদরাসায় জামাত খুলতে যাবেন, এমন সময় আওরঙ্গপুর মাদরাসাকর্তৃপক্ষ ‘মাওলানা সাহেবের জামাত বাড়ানোর প্রস্তাব কার্যকর হবে’ বলে মাওলানা সাহেবকে আওরঙ্গপুর মাদরাসায় নিয়ে আসেন। তাই তিনি আপন মাদরাসায় জামাত না খুলে আওরঙ্গপুর মাদরাসায় চলে আসেন। সেখানে আবার দীর্ঘ দিন পর্যন্ত তাদরীসের খেদমত আঞ্জাম দেন। আল্লাহর শোকর মাওলানা সাহেবের ইখলাছের বদৌলতে নিজ গ্রামে তাঁর প্রতিষ্ঠিত মাদরাসা এখনো টিকে আছে। এ তাদরীস, ইমামতি ও দাওয়াতের মেহনতের কারণে বৃহত্তর শেরপুর এলাকায় মাওলানা শাহ্ আবদুল কাইয়ূম রহ. ‘মাওলানা সাহেব’ নামে একবাক্যে পরিচিত ছিলেন।
আমল; মাওলানা সাহেব যেমন ছিলেন মাদরাসার যোগ্য মুদাররিস, মসজিদের সম্মানিত ইমাম ও দাওয়াতের ময়দানে শফীক দায়ী। তিনি এমনি ছিলেন মুখলিছ আবিদ, দায়িম তেলাওয়াতকারী, মুনীব ইলাল্লাহ, এ যুগে সে যুগের বুযুর্গ ও গুমনাম আল্লাহর ওলী।
তিনি নামাজের প্রতি ছিলেন খুব যত্নশীল। বিশেষ করে তাঁর মত তাহাজ্জুদগুজার খুব কম। শেষ রাতে আল্লাহর দরবারে এতো কাঁদতেন এ জামানায় যার নজীর পাওয়া মুশকিল।
মেহমানদারি; মাওলানা সাহেব জনসেবায় অনন্য ছিলেন। যে কারো সেবা গুরুত্ব দিয়ে করতেন। বিশেষ করে উলামায়ে কেরামের খেদমত ও মেহমানদারি অত্যন্ত মহব্বত ও আজমতের সাথে আঞ্জাম দিতেন। তা করতে পেরে নিজেকে সৌভাগ্য মনে করতেন। একসময় শেরপুরে ছিলো ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের ফেরিঘাট এবং ভাটি অঞ্চলের জলপথের মূল লঞ্চ-ঘাট। তাই শেরপুর এসে উভয় পথের যাত্রীদের বিরতে নিয়ে অবস্থান করতে হতো। এ সুযোগে মাও. আবদুল কাইয়ূম রহ. দোকানে-বাড়ীতে মুসাফির আলিম-উলামা এবং পীর-বুযুর্গের নজীরহীন খেদমত ও সেবা-যত্ন করেছেন। শায়খ বায়মপুরী, শায়খে বরুণী, শায়খে ফুলবাড়ী, শায়খে কৌড়িয়া, শায়খে গহরপুরী ও শায়খে কাতিয়া রাহমাতুল্লাহি আলাইহিম, এমনি বর্তমানের মুহাদ্দিছে হবিগঞ্জী, মুহাদ্দিছে কিয়ামপুরী ও ছাহেবজাদায়ে বরুণী দামাত বারাকাতুহুম-সহ দেশ-বিখ্যাত উলামায়ে কেরাম ও ওয়ায়েজিনে এযাম মাওলানা সাহেবের বাড়ীতে তাশরীফ রেখেছেন এবং তিনি তাঁদের আন্তরিক মেহমানদারী ও সেবা-যত্ন করেছেন।
জীবন-যাপন; মাওলানা সাহেব ছিলেন সুন্নাহের খাঁটি অনুসারী ও সালাফে ছালেহীনের জীবন্ত নমুনা। সব সময় সাদাসিদা ও সহজ-সরল জীবন-যাপন করতেন। রিয়া-লৌকিকতা সযত্নে পরহেজ করতেন এবং মানুষ দেখানোর নিয়তে বেশভূষাকে খুব অপছন্দ করতেন।
এমনি তিনি কোন হালতে হক থেকে সামান্য সরতেন না। বরং সর্বক্ষেত্রে হক ও হক্কানিয়াত নিয়ে বেঁচে থাকার চেষ্টা করতেন। তবে পার্থিব বিষয়ে ছিলেন সম্পূর্ণ উদার। উভয় হাত খুলে লোকদেরকে দান করতেন, সাহায্য করতেন। এমনকি বহু টাকার বাড়ী একজনকে বিনা পয়সায় দিয়ে দেন। এভাবে কতোজনকে কতো দান করেছেন ও কতো ছাড় দিয়েছেন, তার কোন হিসাব নেই, আল্লাহ কবুল করুন।
ব্যবহার; বড়রা সবকিছুতে বড় হন। চাল-চলন ও আচার-ব্যবহারে তারা বড় হন। মাও. আবদুল কাইয়ূম রহ.-এর ব্যবহার ছিলো অতুলনীয়। সাধারণ মানুষের প্রতি তো তিনি উত্তম ব্যবহার করতেন। এমনকি যারা দুশমনি করতো তাদের প্রতিও সুন্দর ব্যবহার করতেন, তাদের জন্য দোয়া করতেন ও তাদের কল্যাণ সাধনে অগ্রণী ভূমিকা পালন করতেন। এক ব্যক্তি তাঁকে দেখলেই গালি দিতো, মাটির উপর থুতু ফেলতো। আর তিনি এর প্রতিদানে ঐ ব্যক্তিকে সব সময় সালাম দিতেন। একবার বরুণার পীর সাহেব হযরত মাওলানা লুৎফুর রহমান বর্ণভী রহ. মাওলানা সাহেবের বাড়ীতে রাত যাপন করেন। হঠাৎ শুনতে পেলেন ঐ ব্যক্তি মাওলানা সাহেবকে গালি দিচ্ছে। কিন্তু মাওলানা ছাহেব গালির কোন জবাব দিচ্ছেন না। তখন বরুণার ছাহেব মাওলানা ছাহেবকে বলেন, ‘আপনি তো উপরে উঠার সিঁড়ি পেয়ে গেছেন।’ অর্থাৎ আপনি গালি নিজ শুনেও কোন প্রতিবাদ করেন না, ছবর করেন। ফলে আল্লাহ তা‘আলা আপনাকে দুনিয়া-আখেরাতে ইজ্জত দান করবেন। পরবর্তীতে মাওলানা সাহেবের সন্তানরা যখন স্বপ্রতিভায় প্রতিষ্ঠিত হন। তখন তিনি তাদেরকে বরুণা ছাহেবের বাণী বর্ণনা করে বলতেন, ‘তোমরা ঐ ব্যক্তির জন্য দোয়া করো, তোমরা তার কারণেই প্রতিষ্ঠিত হয়েছো।’
আদর্শ পিতা; এমনি তিনি ছিলেন নিজ সন্তানদের গড়ে তুলার ক্ষেত্রে এক আদর্শ পিতা। মায়া-মহব্বত ও কড়া-শাসনের সমন্বয় তিনি তাঁর সন্তানদের গড়ে তুলেছিলেন। ফলে তাঁর সাহেবজাদগণ হাফিজ-আলিম, ইমাম-খতীব, লেখক-গবেষক, মুহাদ্দিছ-মুহতামিম ও রাজনীতিবিদ-সমাজসেবী হয়ে দেশ ও জাতীর এবং দ্বীন ও মিল্লাতের খেদমত করে যাচ্ছেন। এমনি তাঁরা লামা-তাজপুর, আওরঙ্গপুর (শেরপুর) ওসমানীনগরে ‘মাদরাতুশ-শায়খ আবদুল কাইয়ূম রহ. লিতালীমুল কুরআন ওয়া সুন্নাহ’ প্রতিষ্ঠা করেন।
তিনি ব্যক্তি ও পারিবারিক জীবনে অক্ষরে অক্ষরে দ্বীন পালন করে চলতেন। আপন পরিবারে পুরা দ্বীন ও শরয়ী পর্দা কায়েম করেছেন, তাতে কোন ধরণের ছাড় দেননি।
দাওয়াত; মাও. আবদুল কাইয়ূম রহ. ইমামতি ও তাদরীসের খেদমতের পাশাপাশি দাওয়াত ও তাবলীগে খুব সময় দেন। তিনি তাতে অত্যন্ত গুরুত্ব দেন। দিনরাতের বেশীর ভাগের সময় তার দাওয়াতের ময়দানে কাটান। ব্যক্তিগত, পারিবারিক ও সামাজিকভাবে তিনি আপন দাওয়াতের কাজ চালিয়ে যান। যে কোন ময়দানে, যে কোন অঙ্গনে দাওয়াত দেওয়ার সুযোগ থাকলে তিনি দাওয়াতি দিয়েছেন।
হযরত মাও. ইলিয়াস রহ. গড়া তাবলীগে অনেক সময় দিয়েছেন। সে তাবলীগের প্রচার-প্রসারের জন্য যারপর নেই কুরবানী করেছেন। ১৯৭৩ সালে আওরঙ্গপুর (শেরপুর) সন্নিকটে নোয়ারাই হাওরে তাবলীগ জামাতের বিভাগীয় ইজতেমা অনুষ্ঠিত হয়। তিনি ছিলেন এর অন্যতম দায়িত্বশীল। তিন দিনের ইজতেমার ইমামতিও করেন তিনি। তাবলীগ জামাতের মুরুব্বী মরহুম হরমুজ উল্লাহ রহ. তাঁকে খুব মহব্বত করতেন। এ মেহনতের দরুন বহু মানুষ সুন্নাহের রাহে ফিরে আসে এবং তাবলীগে গিয়ে নামাজী-আমলদার হয়।
জীবনের শেষ কয়েক বছর দুনিয়াবি সব ব্যস্ততা থেকে সম্পূর্ণ মুক্ত হয়ে ঈমানী দাওয়াতে ও তৌহীদের আহ্বানে দিনরাত কাটান। তখন তাঁর সব সময়ের ফিকির ছিলো যে, মানুষকে অর্থসহ কালিমা শিখানো, ঈমানের তালিম দেওয়া ও তাওহীদের বাণী দিলের গভীরে গেঁথে দেওয়া। এমনি তিনি মানুষের কাছে সত্যের বাণী পৌঁছানোর জন্য দুটি পুস্তিকা লেখেন।
ব্যবসা; তিনি ইমামতি ও তাদরীসের পাশাপাশি কাপড়ের ব্যবসা করতেন। শেরপুরে ফেরিঘাট থাকায় তার দোকান ছিলো বৃহত্তর সিলেটের উলামায়ে কেরামের মিলন-কেন্দ্র। স্বচ্ছ ব্যবসার মাধ্যমে তিনি সারা জীবন হালাল রুজি তালাশ করেছেন। তিনি দু’বার হজ্ব পালন করেছেন।
ইন্তেকাল; ৩রা জিলহজ্ব ১৪২৭ হিজরী মোতাবেক ২৫শে ডিসম্বর ২০০৬ ইংরেজি রোজ-সোমবার সকাল নয়টার দিকে আপন বাড়ীতে সুস্থ অবস্থায় কালিমার তালিম দিতে দিতে চিরদিনের জন্য দুনিয়া ছেড়ে চলে যান আপন খালিক-মালিক আল্লাহ তা‘লার দরবারে। হে আল্লাহ, হযরত মাও. শাহ্ আবদুল কাইয়ূম রহ.-কে আপনি মাফ করুন, ক্ষমা করুন, তাঁর কবরকে বেহেশতের বাগান বানিয়ে দিন ও জান্নাতের উঁচু থেকে উঁচু মাকাম নছীব করুন।
আহ্বান; মুসলিম উম্মাহের প্রতি মাওলানা সাহেবের আহ্বান ছিলো; ঈমানকে তাজা করা, ঈমানকে জিন্দা করা, ঈমানের ছূরত থেকে হাকীকতের দিকে ফিরানো। জীবনের প্রতিটি অঙ্গনে, প্রতিটি ক্ষেত্রে নাম-রুসুম হিসাবে নয়, বাস্তবেই পুরাপুরি ইসলামকে মেনে চলা। তাহলেই মুসলমান দুনিয়া-আখেরাতে ইজ্জত পাবে ও কামিয়াব হবে ইনশাআল্লাহ। আল্লাহ তা‘আলা আমাদেরকে সে আহ্বানে সাড়া দিয়ে আমলে বাস্তবায়নের তাওফীক দান করুন, আমীন।
লেখক- মাওলানা আহমাদ রুম্মান