কারী মাওলানা বেলায়েত হুসাইন রহ. এর সংক্ষিপ্ত জীবন ও কর্ম
October 11 2020, 03:54
নাম :- কারী বেলায়েত হুসাইন
জন্ম / জন্মস্থান :- শাইখুল কুরআন উপাধীতে ভূষিত হওয়া এ মহা মনীষীর জন্ম বর্তমান চাঁদপুর জেলার অন্তর্গত শাহারাস্তি উপজেলার কৃষ্ণপুর — এই গ্রামের নাম পরবর্তীতে তার নামানুসারে বেলায়েতনগর করা হয় — ১৯১০ ইং সনের কোন এক শুক্রবার এক সম্ভ্রান্ত মুসলিম দ্বীনি পরিবারে জন্ম গ্রহন করেন।
শৈশব কাল :- তার বাবা মুনশী আব্দুল জলীল ছিলেন অত্যন্ত খোদাভীরু, সৎ,সমাজের আস্থাভাজন ও কুরআন প্রেমিক। মুনশী আব্দুল জলীলের পুত্র সন্তানের কাকতি মিনতি মাওলাপাক যেন ইব্রাহিম আঃ মত করে কবুল করেন, ২ কন্যা সন্তান আগমনের সু-দীর্ঘ ১৮ বছর পর বৃদ্ধ বয়সে শিশু বেলায়েতেরআগমন হয়। বাবা পুত্র সন্তানের জন্য বহু পূর্বেই উপহার হিসাবে সংগ্রহ করে রেখে যানবিক্ষাত তাফসীরুল কুরআনের একটি গ্রন্থ মুফতী মুহাম্মদ শফি রহ. লিখিত ‘তাফসীরে মা’আরিফুল কুরআন’।
শিক্ষা জীবন :- প্রথমে আপন চাচার নিকট হাতেখড়ি নেয়ার উদ্দেশ্যে চাচার সাথেই ঢাকায় আগমন করেন। ২বছর পর স্বীয় খালাতো বোনের বাড়ীতে জায়গীর থেকে শিক্ষা জীবন শুরু করেন। পরে ফরিদগঞ্জের বারপাইকা মাদরাসায় চলে যান। সেখানেই আলিফ বা থেকে প্রাইমারী স্তর সমাপ্ত করেন। পরবর্তীতে পার্শ্ববর্তি ইসলামিয়া মাদরাসায় মাধ্যমিক স্তর সমাপ্ত করে্ন। সর্বশেষ ঢাকার বড় কাটারা আশ্রাফুল উলুম হুসাইনিয়া মাদরাসায় শিক্ষা জীবনের সমাপ্তি ঘটে। উচ্চ আখলাক ও নিষ্কলুষ চরিত্রের অধিকারী হওয়াতে ছাত্র জীবনেই শিক্ষকদের নজর কাড়েন। বড় কাটারায় মুজাহিদে আযম আল্লামা শামসুল হক ফরিদপুরী, আমীরে শরীয়ত মুহাম্মাদুল্লাহ হাফেজ্জী, পীরজী হুজুর ও মুহাদ্দিস সালাউদ্দিন সাহেবদের মত খ্যাতিমান আসাতেজাগনের সান্নিধ্য লাভ করে ধন্য হন।
কর্ম জীবন :- আল্লামা শামসুল হক ফরীদপুরী রহ. তরুন আলেমে দ্বীন মাওলানা বেলায়েত হুসাইন এর সুপ্ত প্রতিভা, তীক্ষ মেধা, সু-উচ্চ আখলাক, গম্ভীর ভাবাবেগ দেখে নিজের প্রতিষ্ঠিত মাদরাসা গওহর ডাঙ্গায় শিক্ষক হিসাবে নিয়োজিত করেন। এবং নিজ তত্বাবধানে রেখে বাস্তব আমলি প্রশিক্ষণের মাধ্যমে পূর্ণ যোগ্যতা অনুধাবন করে পাঠিয়ে দেন চাঁদপুর জাফরাবাদ হাফেজিয়া মাদরাসায়। সেখানে মোহতামিম এর দায়িত্বে কয়েক বছরের মধ্যেই মাদরাসাকে দাওরায়ে হাদীসে উন্নীত করে সফলতার সূখ্যাতি অর্জন করেন। এছাড়াও ঢাকার জামেয়া নূরিয়া কামরাঙ্গীচর মাদরাসায় ভিত্তি প্রতিষ্ঠা সহ বহু প্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠা করে উন্নত শিক্ষা উপহার দিয়ে ব্যপক প্রশংসিত হন।
অবদান :- নূরানী পদ্ধতির গবেষণাঃ
শাইখুল কুরআন ছাত্র জীবন শুদ্ধ কুরআন চর্চার প্রতি মনোযোগী ছিলেন। তিনি ভাবতেন মাদরাসায় যারা দ্বীন শিখতে আসে তাদের সংখ্যা নগন্য, আর যারা মাদরাসায় আসেনা তাদের সংখ্যা অসংখ্য অগনিত। সমাজের এ বিশাল জন গোষ্ঠির কথা চিন্তা করে ব্যাথিত ও মর্মাহত হতেন। এই ফিকির নিয়ে কওমী মাদরাসার ১৩ বছরের সফল শিক্ষকতার জীবন ছেড়ে পবিত্র কুরআনের তরে নিজকে উৎসর্গ করে উম্মতের দরদে দরদী হয়ে মুক্তির পথের সন্ধানে আগে বাড়তে থাকেন। বাংলাদেশের এক প্রান্ত হতে অপর প্রান্ত পর্যন্ত ছুটে বেড়িয়েছেন মুসলমানের সন্তানদের দরদে। এর ফলশ্রুতিতেই পরবর্তীতে নূরানী কুরআন শিক্ষা পদ্ধতির আবিস্কার করেন। যা পরবর্তীতে তাকে দেশব্যাপী সুনাম ও মর্যাদা এনে দেয়। এ পদ্ধতি বর্তমানে সারা বাংলাদেশে মুসলমানদের জন্য জরুরী দ্বীন শিক্ষার ও পবিত্র কুরআন মাজীদের তেলাওয়াত শেখার এক অলৌকিক দুয়ার খুলে দিয়েছে। যুগের চাহিদাকে সামনে রেখে জাগতিক শিক্ষার সমন্বয় সাধন করে নূরানী শিক্ষা ব্যবস্থাকে আরো প্রাণবন্ত করেছেন। নূরানী মাদরাসার বরকতে হাজারও বেকার যুবকের কর্ম সংস্থানের ব্যবস্থা হয়েছে। নিরক্ষরতার অভিশাপ দূর হয়েছে অনেক বঞ্চিত মানুষের জীবন থেকে।
পারিবারিক জীবনঃ
পারিবারিক জীবনে তিনি ৩ মেয়ে ও ছয় পুত্র সন্তানের জনক ছিলেন, ছেলেরা সকলেই হাফেজ আলেম ও স্ব স্ব ক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠিত।বর্তমানে সবাই নূরানী পদ্ধতিতে শিক্ষার প্রচার প্রসারে নিয়োজিত রয়েছেন।
মৃত্যু তারিখ :- মহাকালজয়ী এ কিংবদন্তি ২৮ রমযানুল মুবারক ১৪৩৮ হিজরী মোতাবেক ২৪ জুন ২০১৭ ইংরেজী, রোজ শনিবার দুপুর ১২.২৫ মিনিটে ঢাকার মোহাম্মদপুরের বাসায় ইন্তেকাল করেন।
তথ্য দানকারীর নাম :- মাওলানা হাবীবুল্লাহ, পৌত্র: আল্লামা ক্বারী বেলায়েত হুসাইন (রহ.)
তথ্য দানকারীর মোবাইল :- raiyanorg@gmail.com