দাওয়াত ও তাবলীগের বর্তমান প্রেক্ষাপটঃ কিছু জরুরী নিবেদন
October 01 2019, 06:34
লেখক: মুফতী মনসূরুল হক দা.বা.
অর্থঃ আর আমি তাকে [মানুষকে] পথ দেখিয়েছি, হয়তো সে কৃতজ্ঞ হয়েছে অথবা অকৃতজ্ঞ। [সূরা দাহর;৩]
মানুষ যেন জাহান্নামের রাস্তা ছেড়ে জান্নাতের রাস্তায় চলতে পারে, এ জন্য আল্লাহ তা‘আলা লক্ষাধিক নবী-রাসূল পাঠিয়েছেন। “আসবাবের” উপর যে গলদ ইয়াকীন মানুষের অন্তরে পয়দা হয়েছে,তা দূর করে সবকিছু আল্লাহ থেকেই হয়,তার ইয়াকীন ও বিশ্বাস সৃষ্টি করার জন্য আম্বিয়া আলাইহিমুস সালাম মানুষের দিলের উপর মেহনত করেছেন। আমাদের ভাগ্য বড় ভালো,নবীওয়ালা সে দিলের উপর মেহনত তথা দাওয়াতের যিম্মাদারী বিনা দরখাস্তে আমাদের দিয়ে দেওয়া হয়েছে। সকল উম্মতের উপর সাধারণভাবে এবং উলামায়ে কেরামের উপর বিশেষভাবে।
আল্লাহ তা‘আলার মেহেরবানী যে,আল্লাহ তা‘আলা নিজ অনুগ্রহে হযরতজী মাওলানা ইলয়াস রহ.-এর মাধ্যমে এই নবীওয়ালা মেহনতের একটি সহজ পদ্ধতি চালু করেছেন। এ পদ্ধতির মাধ্যমে জনসাধারনের জন্য দ্বীনী জযবা তৈরি করা যেমন সহজ হয়েছে,তেমনি উলামায়ে কেরামের জন্য উম্মতের কাছে দ্বীনী ইলম পৌঁছে দেওয়াও সহজ হয়েছে।
আলহামদুলিল্লাহ,প্রচলিত দাওয়াত ও তাবলীগের প্রথম যামানার মুরব্বীদের এখলাস ও কুরবানীর বদৌলতে এ মেহনতের ব্যাপক ফায়দা পরিলক্ষিত হয়েছে। তবে অধুনা এ মেহনতকে কেন্দ্র করে বড় ধরণের একটি ফেতনা শুরু হয়েছে। ফলশ্রুতিতে প্রচলিত দাওয়াত ও তাবলীগ এখন ২টি দলে বিভক্ত হয়ে আছে।
প্রথম দল তাদের নাম রেখেছে “ইতাআতী”। তাদের দাবী হলো তারা মাওলানা সাদ সাহেবের ইতাআত তথা অনুসরণ করেন। দ্বিতীয় দল দলের দাবী তারা হক্কানী উলামাদের সাথে আছেন। এ দু’দলের বিভক্তি এখন সুস্পষ্ট এবং পরস্পরের মতামত ও যুক্তি-প্রমাণও সর্বজনবিদিত।
তবে দ্বীনের অভিভাবক হিসেবে উলামায়ে কেরামের দায়িত্ব হলো, শরী‘আতের কষ্ঠিপাথরে প্রত্যেক দলের দাবীর যথার্থতা নিরীক্ষণ করা এবং দ্বীনী কাজে সৃষ্ট এ ফেতনার অবসানে উম্মতকে সঠিক নির্দেশনা প্রদান করা। এ প্রেক্ষিতে বক্ষমান নিবন্ধে কিছু নিবেদন করছি।
প্রথম দল যারা মাওলানা সাদ সাহেবের ইতাআত তথা অনুসরণের দাবী করছে, তারা এ দাবী করতে গিয়ে বেশ কিছু ভুলের শিকার হয়েছেনঃ
১. তাদের প্রথম ভ্রান্তি হলো, দাওয়াত ও তাবলীগ একটি দীনী কাজ হওয়া সত্ত্বেও তারা এক্ষেত্রে উলামায়ে কেরামের নেতৃত্ব মানছেন না। এক্ষেত্রে তাদের ভ্রান্তির কারণ হলো যে,তারা উলামায়ে কেরামের দ্বীনী অভিভাবকত্বের শরঈ ভিত্তি এবং প্রচলিত দাওয়াত ও তাবলীগের মেহনতে তাদের অবদানের প্রামাণ্য ইতিহাস সম্পূর্ণরূপে বিস্মৃতি হয়ে গেছে..!! এ দুটি বিষয়েই আমরা কিছুটা বিস্তারিত নিবেদন করছি।
প্রথম বিষয় : উলামায়ে কেরামের দ্বীনী অভিভাবকত্বের শরঈ ভিত্তিঃ
মূলত উলামায়ে কেরামকে দাওয়াতের এ যিম্মাদারী শরী‘আতের পক্ষ হতেই বিশেষভাবে দেওয়া হয়েছে। প্রথমত উম্মত হিসাবে,দ্বিতীয়ত আম্বিয়া আ.এর ওয়ারিস হিসাবে। পবিত্র কুরআনের বর্ণনা অনুযায়ী আম্বিয়া আ.-এর মোট চারটি যিম্মাদারী প্রমাণিত হয়। এক. দাওয়াত ও তাবলীগ; দুই. তাযকিয়া বা আত্মশুদ্ধি; তিন. কুরআনের হুকুম আহকাম শিক্ষা দেওয়া; চার. সুন্নাহ শিক্ষা দেওয়া।
এ চার যিম্মাদারীর কথা আল্লাহ তা‘আলা কুরআনে চার স্থানে বলেছেন,এক. সূরা বাকারা:১২৯,দুই. সূরা বাকারা: ১৫১,তিন. সূরা আলে ইমরান:১৬৪,চার. সূরা জুমআ: ২ নং আয়াতে।
আর উলামায়ে কেরামের ব্যাপারে নবীজি সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহী ওয়া সাল্লাম ঘোষণা করেছেন,উলামায়ে কেরাম আম্বিয়া আ.-এর ওয়ারিস।(মুসনাদে আহমাদ;হাদীস নং ২১৭১৫)
তাছাড়া পবিত্র কুরআনে কারীমের আয়াত فَاسْأَلُوا أَهْلَ الذِّكْرِ إِنْ كُنْتُمْ لَا تَعْلَمُوونَ অর্থঃ যদি তোমরা না জান,তবে যিকিরের ধারক তথা উলামায়ে কেরামকে জিজ্ঞাসা কর। [সূরা নাহল;আয়াত নং ৪৩] এ আয়াতেও হক্কানী উলামায়ে কেরামের অনুসরণ ফরয বলা হয়েছে।
মূলত এ চারটি দায়িত্বই দ্বীনী দাওয়াতের অন্তর্ভূক্ত। আল্লাহ তা‘আলা নিজ অনুগ্রহে উলামায়ে কেরামকে পারস্পারিক সর্মথন,সহযোগিতা ও সম্ভাব্য ক্ষেত্রে অংশগ্রহণের সাথে এ চারটি খেদমত আঞ্জাম দেওয়ার জন্য শ্রেণিবিভক্ত করেছেন। নতুবা সকলের জন্য এককভাবে চারটি দায়িত্ব আঞ্জাম দেওয়া অত্যান্ত কষ্টসাধ্য বিষয় ছিলো।
দ্বিতীয় বিষয়ঃ প্রচলিত দাওয়াত ও তাবলীগের উলামায়ে কেরামের অবদান প্রসঙ্গ
মাওলানা ইলয়াস রহ. নিজে আলেম ছিলেন,তিনি মাওলানা রশীদ আহমাদ গাঙ্গুহী রহ.,মাওলানা খলীল আহমাদ সাহারানপুরী রহ. এর সোহবাতে ও থানভী রহ. এর প্রত্যক্ষ পরামর্শে এবং মাওলানা হুসাইন আহমাদ মাদানী রহ., মুফতী কেফায়াতুল্লাহ রহ.,মুফতিয়ে আজম শফী রহ.,দারুল উলূম দেওবন্দের মুহতামিম মাওলানা ক্বারী তাইয়েব সাহেব রহ.,দিল্লীর আব্দুর রব মাদরাসার মুহতামিম মাওলানা মুহাম্মাদ শফী’ সাহেব রহ.,সাহারানপুর মাযাহিরুল উলূম মাদরাসার নাযিম মাওলানা আব্দুল লতীফ সাহেব রহ.,দারুল উলূম দেওবন্দের উস্তাদ মাওলানা ই’যায আলী সাহেব রহ.,শাইখুল হাদীস মাওলানা যাকারিয়া সাহেব রহ. সহ সমকালীন সকল বুযুর্গানে দ্বীনের সহযোগিতা ও পৃষ্ঠপোষকতায় এ কাজ শুরু করেছিলেন এবং তাদেরই পরামর্শ মত এ কাজের নকশা নির্ধারণ করেছেন। মাওলানা ইলয়াস রহ.নিজেই বলেছেন,যে,“এ কাজের বরকত মূলত হযরত [থানভী রহ.]-এর দু‘আরই ফসল”!
সাইয়্যেদ আবুল হাসান নদভী রহ. তার বিখ্যাত গ্রন্থ ‘হযরত মাওলানা ইলয়াস রহ. আওর উনকি দ্বীনী দাওয়াত’ গ্রন্থে লিখেছেন যে,“হযরত মাওলানার ধারণায় [দাওয়াত ও তাবলীগের মেহনতে] এই সমস্ত বুযুর্গানে দ্বীনের প্রত্যক্ষ সম্পৃক্ততা এবং তাঁদের পৃষ্ঠপোষকতা অত্যন্ত জরুরী ছিল,যা ছাড়া তিনি এই কাজকে ঝুঁকিপূর্ণ এবং আশঙ্কাজনক মনে করতেন। এই সব বিষয় চিন্তা করেই হযরত মাওলানা প্রথম জামা‘আতের সফরের জন্য নিজ মাতৃভূমি কান্ধলাকে নির্বাচন করলেন। কেননা কান্ধলা ছিল তদানীন্তন যুগের একটি বিশেষ ইলমী মারকায এবং তাঁর নিজের শহর। [বিস্তারিত দেখুন: দীনী দাওয়াত;পৃষ্ঠা.৫৭,৮০,১১৪,১১৫,১২৬-১২৭],[তাজদীদে তা’লীম ও তাবলীগ: পৃ. ১৭৩]
২. তাদের দ্বিতীয় ভ্রান্তি হলো, তারা উলামায়ে কেরামের ব্যপারে খারাপ ধারণা পোষণ করেন। তাদের ধারনা,উলামায়ে কেরাম প্রচলিত দাওয়াত ও তাবলীগ ছাড়া অন্যান্য যে কাজে ব্যস্ত আছেন তথা মসজিদ,মাদরাসা,খানকাহ,ওয়াজ মাহফিল,দ্বীনী বই পুস্তক লেখা ইত্যাদি, -এ সকল কাজ, নবীওয়ালা মেহনত নয়..! তারা প্রচলিত দাওয়াত ও তাবলীগকেই একমাত্র নবীওয়ালা মেহনত মনে করেছেন।
এ বিষয়ে নিবেদন হলো, যদি মাওলানা ইলয়াস রহ. -এর প্রচলিত দাওয়াত ও তাবলীগই দাওয়াতের একমাত্র মাধ্যম হয়ে থাকে,তবে প্রশ্ন হলো, ১৪ শত বছর উম্মতে মুহাম্মাদি কি দাওয়াতের কাজ করেনি? না করলে আমাদের পর্যন্ত দ্বীন পৌঁছলো কী করে?
মূলত নবীওয়ালা এই দাওয়াতের মেহনত অত্যান্ত ব্যাপক একটি বিষয়। উলামায়ে কেরাম আম্বিয়া আ. -এর ওয়ারিস হিসেবে নবীওয়ালা এই মেহনত বিভিন্ন পথ ও পদ্ধতিতে সম্পন্ন করছেন। যেমন, দীনী বইপুস্তক লেখা,দীনী ওয়াজ মাহফিল করা,তালেবে ইলমকে শিক্ষা দেয়া,মসজিদ,মাদরাসা,খানকাহ ইত্যাদি। এ সকল পদ্ধতিই দাওয়াতের অন্তুর্ভুক্ত। কেননা,দাওয়াতের মাকসাদ হলো ইলম এবং দীনী আমানত পৌঁছে দেওয়া। আর এ সবই দ্বীন পৌঁছে দেওয়ার এক একটি মাধ্যম।
তবে হ্যাঁ,দাওয়াতের এ সকল পদ্ধতির পাশাপাশি হযরত মাওলানা ইলয়াস রহ. দাওয়াতের মেহনতের যে ধারা শুরু করেছেন,সে পদ্ধতিতে উম্মতের সব তবকার কাছে খুব সহজে দীন পৌঁছানো যায়। ফলে জনসাধারনের জন্য যেমন তাদের দাওয়াতের দায়িত্ব আঞ্জাম দেওয়া সহজ,তেমনি উলামায়ে কেরামের জন্যও তাদের ইলমী আমানত উম্মতের সব তবকার কাছে পৌঁছে দেওয়া সহজ।
হযরত মাওলানা ইলয়াস রহ. দাওয়াতের ব্যাপকতা প্রসঙ্গে বলেন,“আমাদের এই তাবলীগী আন্দোলন, দ্বীনী তালীম ও তরবিয়ত বিস্তার করা এবং দ্বীনী যিন্দেগী ব্যপকভাবে প্রচার করার আন্দোলন। [মাওলানা মানযূর নোমানী রহ. কৃত ‘মালফূযাতে হযরত মাওলানা ইলয়াস’;মালফূয নং ১৩৫]
যে সকল সাধারণ মানুষ উলামায়ে কেরামের দ্বীনী ব্যস্ততার উপর আপত্তি উত্থাপন করেন,হযরতজী ইলয়াস রহ. তাদের প্রতি অসন্তুষ্ট হয়ে বলতেন,“তোমরা ব্যবসা-বাণিজ্য,চাকরি-কৃষি ইত্যাদি নিছক দুনিয়াদারি ত্যাগ করে এ কাজে আসতে কত ইতস্তত করে থাকো,আর উলামায়ে কেরাম যেসব কাজ করেন,সেগুলোও তো দ্বীনের কাজ। তারা তাদের কাজ ছেড়ে এত সহজে চলে আসবেন,এমন আশা কর কেন? তাদের প্রতি তোমাদের অভিযোগ কেন?”
জনসাধারণকে সম্বোধন করে তিনি আরো বলতেন,“যদি হাযারাত উলামায়ে কেরাম এই কাজের দিকে মনোযোগ কম দেন কিংবা অংশ গ্রহণ না করেন তাহলে তাদের অন্তরে যেন উলামায়ে কেরামের প্রতি কোন ধরনের প্রশ্ন উত্থাপিত না হয়। বরং এটা বুঝা উচিৎ যে,উলামায়ে কেরাম আমাদের থেকেও গুরত্বপূর্ণ কাজে মাশগুল আছেন, যার ফলে তারা আমাদেরকে সময় দিতে পারছেন না। তারা তো গভীর রজনীতেও ইলমে দ্বীনের খেদমতে মাশগুল থাকেন যখন অন্যরা আরামের নিদ্রায় বিভোর হয়ে থাকে। [সাইয়্যেদ আবুল হাসান নদভী রহ. কৃত “মালফূযাতে হযরত মাওলানা ইলয়াস”; মালফূয নং ৫৪]
৩. তাদের তৃতীয় ভ্রান্তি হলো,উলামায়ে কেরাম সাদ সাহেবের যে ভুলগুলো ধরিয়ে দিচ্ছেন, এটাকে গীবতের অন্তুর্ভুক্ত মনে করে, উল্টো উলামায়ে কেরামের দোষ চর্চায় লিপ্ত হয়েছেন। এক্ষেত্রে তাদের ভ্রান্তির কারণ হলো,তারা দ্বীনের সঠিক ধারা রক্ষার্থে উলামায়ে কেরামের প্রতিবাদী হওয়ার শরঈ যৌক্তিকতা সম্পর্কে অজ্ঞতার শিকার হয়েছেন। এ সম্পর্কে নিবেদন হলো, দাওয়াত,তালীম ও তাযকিয়ার নববী দায়িত্বের পাশাপাশি নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উলামায়ে কেরামকে আরো একটি দায়িত্ব দিয়েছেন। আর তা হলো, নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন-يحمل هذا العلم من كل خلف عدوله ينفون عنه تحريف الغالين وتأويل الجالين وانتحال المبطلين
এই ইলম (কুরআন-হাদীস) কে ধারণ করবে,প্রত্যেক উত্তরসূরীদের মধ্যে হতে ঐ সকল (উলামায়ে কেরাম),যারা আস্থাভাজন হিসেবে স্বীকৃত। তারা এ ইলম থেকে বাড়াবাড়ির শিকার ব্যাক্তিদের বিকৃতিসাধন,অজ্ঞদের অপব্যাখ্যা এবং বাতিলপন্থিদের কারচুপি কে রোধ করবে। (মুকাদ্দামা;আত্তামহীদ লি ইবনে আব্দিল বার;১/৫৯)
অর্থাৎ উলামাদের আরেকটি দায়িত্ব হলোঃ কেউ যদি ইসলামের ক্ষতি করতে আসে,ইসলামের নামে কেউ কোন কিছুর ভুল প্রচার করে বা ইসলামের কোন বিষয় ভুল ব্যাখ্যা করে,তাহলে এই ভুল যে ব্যক্তি করলো, তাকে বলতে হবে যে, তার এই কাজ ভুল। সে যেন এ ভুল কথা/কাজ থেকে ফিরে আসে এবং জনগণকে জানিয়ে দেয় যে,আমার অমূক কথাটি ভুল ছিলো। ভুলের শিকার ব্যক্তি যদি তার ভুলের ঘোষণা না করেন,তাহলে সাধারণ মুসলমানদের ঈমান-আমল হিফাযতের জন্য উলামায়ে কেরামের দায়িত্ব ঐ ভুলগুলো জনগণকে জানিয়ে দেওয়া। যাতে করে তারা উক্ত ভুল থেকে নিজেদের ঈমান-আমল হিফাযত করতে পারে।
উলামায়ে কেরামের ব্যাপারে খারাপ ধারণা পোষণ প্রসঙ্গে হযরতজী এটাও বলেছেন যে,“একজন সাধারণ মুসলমান সম্পর্কেও কোন কারণ ছাড়া বদগুমানী (খারাপ ধারণা পোষণ করা) নিজেকে ধ্বংসের দিকে নিক্ষেপ করে। আর উলামায়ে কেরামের উপর প্রশ্ন উত্থাপন (বদগুমানী করা) তো এর চেয়ে অনেক বেশী মারাত্মক ও ভয়ংকর। [মালফুযাতে হযরত মাওলানা ইলয়াস, মালফুয নং ৫৪]
হযরতজী ইলয়াস রহ. এর শায়খ, হযরত মাওলানা রশীদ আহমাদ গাঙ্গুহী রহ. বলেছেন,“যারা উলামায়ে কেরামের প্রতি অন্তরে বিদ্বেষ এবং বদগুমানী পোষণ করে তাদের চেহারা কবরে কুদরতিভাবে কেবলার দিক থেকে ঘুরিয়ে দেয়া হবে। যতই তাদের চেহারা কেবলামুখী করা হোক,তা কেবলার দিক থেকে ঘুরে যাবে!”
৪. তাদের চতুর্থ ভুল হলো যে,তারা সাদ সাহেবকে এখনও অনুসরণীয় মনে করছেন। অথচ শরী‘আতের দৃষ্টিতে কোনো ব্যক্তির অনুসরণের জন্য শর্ত হলো,সে “হক” [সত্য ও সঠিক পথ ও মত]-এর উপর থাকতে হবে। সুতরাং সাদ সাহেবের “ইতাআত” ও বৈধ নয়।
সহীহ বুখারীর এক বর্ণনায় [হাদীস নং ৪৩৪০] এসেছে যে,নবীজি এক আনসারী ব্যক্তিকে একটি ছোট দলের আমীর বানিয়ে প্রেরণ করলেন এবং লোকদেরকে তাঁর অনুসরণ করতে বললেন। উক্ত ব্যক্তি কোনো কারণে অসন্তুষ্ট হয়ে অধিনস্ত সাহাবায়ে কেরাম থেকে তার “ইতাআত”-এর স্বীকৃতি নিয়ে লাকড়ী জমা করতে এবং আগুন জ্বালাতে নির্দেশ দিলো। অতঃপর যখন আগুন জ্বালানো হলো,তখন উক্ত ব্যক্তি অধিনস্ত সাহাবায়ে কেরামকে আগুনে প্রবেশ করার আদেশ প্রদান করলো! কিন্তু সাহাবায়ে কেরাম এ “ইতাআত” থেকে বিরত থাকলেন এবং বিষয়টি নবীজির কাছে গিয়ে উত্থাপন করলেন। তখন নবীজি বললেন,“যদি তোমরা আগুনে প্রবেশ করতে,তবে কেয়ামত পর্যন্ত আর তা থেকে বের হতে পারতে না। “ইতাআত” কেবল পুণ্যের মধ্যে [বৈধ আছে]”।
উল্লেখ্য,সাদ সাহেব তিন ধরণের বিভ্রান্তির শিকার হয়েছেনঃ
১. কুরআন-হাদীসের অপব্যাখ্যা;
২. দ্বীনের বিভিন্ন বিষয়ের মনগড়া ব্যাখ্যা বিশ্লেষণ;
৩. দ্বীনের অন্যান্য মেহনত এবং এর সাথে সম্পৃক্তদের প্রতি অবজ্ঞা;
৪. নবী-রাসূলগণের সমালোচনা করা;
৫. দাওয়াত ও তাবলীগের পূর্বসূরীদের উসূল বর্জন;
উল্লিখিত পাঁচটি বিষয়ে সাদ সাহেবের বিভ্রান্তির বিষয়ে প্রামাণ্য আলোচনা ইতোপূর্বে সুস্পষ্টভাবেই উলামায়ে কেরাম উল্লেখ করেছেন। কাজেই তার পুনরাবৃত্তি নিষ্প্রয়োজন। আর তার ব্যাপারে যে প্রসিদ্ধ আছে যে,তিনি রুজু করেছেন,-এ বিষয়টি সম্পূর্ণরূপে ভুল। কেননা,প্রথমত,দারুল উলূম দেওবন্দের কাছে রুজু করলেও আম মজমার মধ্যে প্রকাশ্যে তিনি এখনও নিজের সব ভুল স্বীকার করে সঠিক বিষয়ের ঘোষণা দেননি। দ্বিতীয়ত,দারুল উলূম দেওবন্দের কাছে রুজু করার ক্ষেত্রে কেবল একটি ঘটনা [হযরত মূসা আ. এর ঘটনা]-এর ব্যাপারে দেওবন্দ তার রুজু গ্রহণযোগ্য বিবেচনা করেছে,অন্যান্য বিতর্কিত বিষয়ে দেওবন্দ তার আপত্তি বহাল রেখেছে। তৃতীয়ত,দেওবন্দের কাছে প্রেরিত সর্বশেষ রুজুনামা’র পরও তার অনেক বিতর্কিত বক্তব্য পাওয়া গেছে।
কাজেই যারা সাদ সাহেবের ইতাআত তথা অনুসরণের দাবী করছেন,তারা নিঃসন্দেহে ভুলের উপর আছেন এবং বর্তমান অবস্থায় সাদ সাহেবের অনুসরণ করার অর্থ হলো-“একটি গোমরাহ ও পথভ্রষ্ট দল তৈরিতে সহায়তা করা”!আল্লাহ তা‘আলা আমাদেরকে সহীহ বিষয়টি বুঝার তাওফীক দান করুন এবং সকল ইতআতী ভাইদেরকে গলদ রাস্তা পরিহার করে হক্কানী উলামায়ে কেরামের সাথে জুড়ে পরিপূর্ণ দ্বীন হাসিলের তাওফীক দান করুন। আমীন ॥ আমরা তাদের ব্যপারে এ দু‘আই করি। কেননা,তারাও আমাদের ভাই। তাদের সহীহ রাস্তায় আনা আমাদের দায়িত্ব এবং তাদের পাওনা।
যারা উলামায়ে কেরামের সাথে আছেন, তাদের করণীয়ঃ
আর দ্বিতীয় দল যারা উলামায়ে কেরামের সাথে আছেন বলে দাবী করছেন,তাদেরও কিছু করণীয় আছে। কেননা, তাদেরও কিছু ভাই উলামাদের সাথে থাকার ব্যপারে কেবল নিছক দাবী-ই করে যাচ্ছেন। উলামাদের সোহবাত, তরবিয়ত ও দ্বীনী তালীম তারা সঠিকভাবে গ্রহণ করছে না। অর্থাৎ ফরযে আইন পরিমান ইলম শিখতে তারা তৎপর নয়। সহীহ করে কুরআনে কারীমের তিলাওয়াত শিখতে তারা সময় বের করছে না।
কাজেই “উলামাদের সাথে আছি” -এ কথার যথার্থতা প্রমাণ করতে হলে উলামাদের সোহবাতে এসে কয়েকটি কাজ করতে হবেঃ
১. প্রথম যে কাজ করতে হবে তা হলো, প্রতিটি বিষয়ে উলামাদের সাথে পরামর্শ করতে হবে। চাই দীনী বিষয় হোক অথবা দুনিয়াবী।
২. ফরযে আইন পরিমান ইলম শিক্ষা করা। ফরযে আইন ইলম হলো কয়েকটি বিষয়ের ইলম হাসিল করাঃ
ক. ঈমান সহী শুদ্ধ করা। ৭টি বিষয়ের উপর ঈমান আনার নাম ঈমান। এই ৭টি বিষয় কী তা জানতে হবে। কোন কোন কারণে ঈমান নষ্ট হয় তা জানতে হবে। জেনে তা থেকে বেঁচে থাকতে হবে।
খ. ইবাদত বন্দেগী সুন্নত তরীকায় করা। প্রয়োজনে বাস্তব ট্রেনিং নেওয়া। যেখানে বাস্তব প্রশিক্ষণের মাধ্যমে নামায শিখানো হয় সেখানে গিয়ে নামায শিক্ষা করা।
গ. উলামায়ে কেরামের সাথে পরামর্শ করে কুরআন সহী-শুদ্ধভাবে তিলাওয়াত শিক্ষা করার জন্য সময় দেয়া। যেখানে খুব সহজে,অল্প সময়ে কুরআন সহী-শুদ্ধভাবে শিখানো হয় সেখানে গিয়ে শিক্ষা করা। আফসোস!! আজকাল এমন ভয়ংকর অবস্থা যে,যদি তাবলীগের সাথীদের কাউকে কুরআন শিক্ষা করতে বলা হয় তাহলে তারা গাশতের দোহাই দিয়ে কুরআন শিক্ষা করার বিষয়টিকে গুরুত্ব দেন না। ইলম না থাকার কারণে গুরত্বপূর্ণ বিষয়কে কম গুরুত্ব দিচ্ছে। যেমন, এক ভাই পাগড়ীর ফযিলত শুনে পাগড়ী পড়ার ইচ্ছা করলো। কিন্তু তার নিকট পাগড়ী না থাকায় লুঙ্গি খুলেই পাগড়ী পড়লো। (নাউযুবিল্লাহ)। ফরজ নষ্ট করে মুস্তাহাবের উপর আমল করলো!!!
ঘ. কামাই-রোজগার হালাল করা। চাকরী-ব্যবসা করতে চাইলে মুফতীয়ানেকেরামের নিকট থেকে মাসাইল জেনে করা। যেখানে মাসাইলের আলোচনা হয় সেখানে সময় দিয়ে মাসাইল শিক্ষা করা।
ঙ. পিতা-মাতার হক সহ বান্দার হক শিক্ষা করা। উলামায়েকেরামের সাথে সময় দিয়ে দিয়ে বান্দার হক শিক্ষা করা।
চ. একজন হক্কানী আল্লাহওয়ালা শায়েখের সাথে ইসলাহী সম্পর্ক করে নিজের আত্মশুদ্ধি করা। অন্তরের যে দশটি রোগ আছে তা দূর করা। দশটি গুণ হাসিল করা।
এ কথা পূর্বে বলা হয়েছে যে,আল্লাহ তা‘আলা উলামায়ে কেরামকে আম্বিয়া আ. -এর ওয়ারিস হিসেবে চারটি দায়িত্ব দিয়েছেন। এক. দাওয়াত ও তাবলীগ তথা দ্বীনের কথা উম্মতের সকল স্তরে পৌঁছে দেওয়া। দুই. তাযকিয়া বা আত্মশুদ্ধি তথা হিংসা,লোভ,কৃপণতা,পরশ্রীকাতরতা সহ বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত মানবাত্মার চিকিৎসা করে দুনিয়া বিমুখতা, দানশীলতা,অল্পেতুষ্টি প্রভৃতি ভাল ভাল গুণাবলী দ্বারা তাকে সুসজ্জিত করা। যাতে করে একজন মানুষ পশুর স্তর থেকে ফিরিশতাদের স্তরে উন্নীত হতে পারে। তিন. কুরআনের হুকুম আহকাম উম্মতকে শিক্ষা দেওয়া। চার. নবীজীর হাদীস ও সুন্নাহ শিক্ষা দেওয়া। কাজেই উলামাদের সাথে থাকার দাবী তখনই যথার্থ হবে,যখন সাধারণ মানুষ তাদের থেকে এ চারটি বিষয়ে সোহবাত গ্রহণ করবে।
প্রচলিত দাওয়াত ও তাবলীগের দ্বারা পরিপূর্ণ দ্বীন শেখা যায় না;বরং দ্বীন শেখার জযবা তৈরি হয় আর দ্বীন শেখার জন্য যে উলামাদের কাছে যেতে হবে- এ বিষয়টি হযরতজী ইলয়াস রহ. -এর মালফূযাত থেকেই জানা যায়। তিনি নিজেই এ বিষয়টি স্পষ্ট করে বলেন,“আমাদের এই আন্দোলনের মূল উদ্দেশ্য হল;সমস্ত মুসলমানদেরকে جميع ما جاء به النبي صلى الله عليه وسلم শেখানো (অর্থাৎ ইসলামের পুরা ইলমী এবং আমলী নেযামের সাথে উম্মতকে সম্পর্কযুক্ত করে দেওয়া)। এটা তো হল আমাদের মূল উদ্দেশ্য’।
এরপর হযরত বলেন,
رہی قافلوں کی یہ چلت پھرتاور تبلیغی گشت سو یہ اس مقصد کے لئے ابتدائی ذریعہ ہے، اور کلمہ نماز کی تلقین و تعلیم گویا ہمارے پورے نصاب کی “الف بے تے ” ہے۔
“বাকি রইল জামা‘আতের চলাফেরা এবং গাশত করা এটা তো হল মূল মাকসাদে পৌঁছার একটি প্রাথমিক স্তর। আর কালিমা এবং নামায শিক্ষা সেটা হল আমাদের পুরা নেসাবের আলিফ,বা,তা-এর শিক্ষা করার মত।”
তিনি আরো বলেন,“আর এটাও পরিস্কার কথা যে,আমাদের এই কাফেলা সম্পূর্ণ কাজ করতে পারবে না। বরঞ্চ তাদের থেকে এতুটুকুই হতে পারে যে,সব জায়গায় গিয়ে নিজেদের চেষ্টা-মেহনতের মাধ্যমে উম্মতের মাঝে একটি আলোড়ন ও চেতনা সৃষ্টি করে দিবে এবং সমাজের উদাসীন (তথা দ্বীন সম্পর্কে বেখবর) লোকদেরকে সেখানকার স্থানীয় দ্বীনদার লোকদের সাথে সম্পর্ক করে দিবে। এবং দ্বীন ও ইসলাম নিয়ে চিন্তা ফিকিরকারী স্থানীয় উলামায়ে কেরাম এবং নেককার লোকদেরকে সাধারণ মানুষের ইসলাহ ও সংশোধনের কাজে লাগানোর চেষ্টা করবে। হযরত মাওলানা মনযূর নোমানী রহ. রচিত “মালফূযাতে হযরত মাওলানা ইলয়াস রহ.” ২৪ নং মালফুয]
তিনি আরো বলেছেন,
اپنی اس تحریک کے ذریعہ ہر جگہ کے علماءاور اہل دین اور دنیا داروں میں میل ملاپ اور صلح وآشتی کرانا چاہتے ہیں۔
“আমি এই ‘তাহরীকের’ মাধ্যমে প্রত্যেক জায়গায় উলামায়ে কেরাম ও বুযুর্গানে দ্বীন এবং দুনিয়াদারদের মাঝে মেলামেশা ও সৌহার্দ্য ভালবাসা ও সম্পৃীতি সৃষ্টি করতে চাই। [“মালফূযাতে হযরত মাওলানা ইলয়াস রহ.” ১০২ নং মালফুয]
তাযকিয়া তথা আত্মশুদ্ধির ব্যপারে হযরতজী ইলয়াস রহ. -এর দৃষ্টিভঙ্গি জানা যায়, শাইখুল হাদীস মাওলানা যাকারিয়া রহ. কে লেখা এক পত্রের মাধ্যমে। সেখানে হযরতজী রহ. উল্লেখ করেন,“আমার দীর্ঘ দিনের আকাঙ্ক্ষা এই যে, তাবলীগের জামা‘আতগুলো বুযুর্গানে দ্বীনের খানকাগুলোতে গিয়ে খানকার পরিপূর্ণ আদব রক্ষা করে সেখানকার ফয়েয-বরকতও গ্রহণ করুক। খানকায় অবস্থানের সময়ের ভিতরেই অবসর সময়ে আশপাশের গ্রামগুলোতে গিয়ে দাওয়াতের কাজগুলোও যেন জারী থাকে। আপনি এই ব্যাপারে আগ্রহী লোকদের সাথে পরামর্শ করে কোন একটি নিয়ম ঠিক করে রাখুন। বান্দাও কিছু সংখ্যক সাথীসহ এই সপ্তাহেই হাজির হয়ে যাবে। দেওবন্দ এবং থানাভবনে যাওয়ারও ইচ্ছা আছে।” [হযরত মাওলানা সাইয়্যেদ আবুল হাসান নদভী রহ. এর রচিত “মাওলানা ইলয়াস রহ .আওর উনকী দীনী দাওয়াত” পৃ. ১০১]
সারকথা,হযরত মাওলানা ইলয়াস রহ. যে মেহনত চালু করেছিলেন,ঐ মেহনতের এই উদ্দেশ্য ছিল যে,তিনি চেয়েছিলেন,সাধারণ মানুষ এই মেহনতের দ্বারা দ্বীনের রাস্তায় উঠবে। বাকী পরিপূর্ণ দ্বীনের উপর চলার জন্য,দ্বীনী মাসায়েলের তা’লীম এবং তাযকিয়া তথা আত্মার রোগ নিরাময়ের জন্য উলামায়ে কেরামের কাছে যাবে। তিনি আশা করেছিলেন যে,এই মেহনত যে করবে তার মধ্যে দ্বীনের এই পরিমাণ বুঝ আসবে যে, তখন সে নিজেই উলামাদের কাছে গিয়ে দ্বীনের বাকী অংশগুলো শিখে নিবে। কুরআন সহী করে পড়া শিখে নিবে,নামায শিখবে,হালাল-হারাম শিখবে, পুরো দ্বীনের মাসাইল শিখার আগ্রহ পয়দা হবে।
কাজেই মাওলানা ইলয়াস রহ. -এর দাওয়াত ও তাবলীগের মাকসাদ ভালোভাবে বুঝতে হবে যে,এই মেহনতের উদ্দেশ্য শুধু রাস্তায় উঠানো। এই মেহনতের উদাহরণ হলো, রেললাইনের পাতের উপর রেলগাড়িকে উঠানো। আর চলার জন্য ইঞ্জিন,চালক ইত্যাদি লাগবে। এগুলো হলো উলামায়ে কেরাম এবং তাদের পরামর্শ। এই জন্য তিনি এই মেহনতকে প্রাথমিক মেহনত বলেছেন।
যেমনিভাবে ডাক্তারের সাথে কেবল সম্পর্ক থাকলেই যেমন সুস্থ হওয়া যায় না;বরং ডাক্তারকে রোগ জানাতে হয় এবং তার ব্যবস্থাপত্র অনুযায়ী নিয়মিত আমল করতে হয়,তেমনি যারা উলামায়ে কেরামের সাথে আছেন বলে দাবী করছেন, তাদেরও ঈমান-আমল সহীহ করতে হলে উলামায়ে কেরামের সাথে সব বিষয়ে পরামর্শ করতে হবে এবং দ্বীনী মাসায়েলের ইলম হাসিল করার পাশাপাশি অন্তরের রোগের ব্যপারে হক্কানী পীর-মাশায়েখকে অবহিত করে প্রদত্ত ব্যবস্থাপত্র অনুযায়ী আমল করতে হবে। কেননা,শুধু দাওয়াতের কাজের নাম পূর্ণাঙ্গ দ্বীন নয়। কাজেই শুধু দাওয়াত নিয়ে না থেকে উলামায়ে কেরামের কাছ থেকে পূর্ণ দ্বীন শিক্ষা করা,আমল করা এবং দুনিয়াবাসীর নিকট দাওয়াত দেওয়া এ উম্মতের দায়িত্ব এবং কর্তব্য।
“উলামাদের সাথে আছি” এ দাবী যারা করছেন,তারা যদি উলামায়ে কেরামের সোহবাতে গিয়ে পূর্ণ দ্বীন শিক্ষা না করেন,তাহলে তাদের মধ্যে আর ইতাআতী ভাইদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য কোনো পার্থক্য থাকে না!
আল্লাহ তা‘আলা আমাদেরকে সহীহভাবে অনুধাবনের তাওফীক দান করুন। আমীন ॥
মুফতী মনসূরুল হক
শাইখুল হাদীস ও প্রধান মুফতী
জামিআ রাহমানিয়া আরাবিয়া,আলী অ্যান্ড নূর রিয়েল এস্টেট,মুহাম্মাদপুর,ঢাকা।