সারা দেশের মাদ্রাসাসমূহ

মাওলানা কুতুব উদ্দিন রহ. এর জীবন ও কর্ম

November 10 2018, 09:08

লিখেছেন- আতাউল কারীম মাকসুদ >

সকল প্রাণীই মরণশীল। মৃত্যু কোনো অপরিচিত বিষয় নয়। দুনিয়াতে জন্ম গ্রহণ করা হয় মৃত্যুকে আলিঙ্গন করার জন্যই। তবে কিছু কিছু মানুষ মৃত্যুর পরও অমর হয়ে থাকেন। পরবর্তীদের জন্য হন প্রেরণা ও চেতনার আলোকবর্তিকা। পীরজী হুযূর রাহ, সদর ছাহেব রহ., হাফেজ্জী হুযূর রহ., খতীব ছাহেব রহ., শায়খুল হাদীস রহ. প্রমুখ হলেন সে ধারারই উজ্জ্বল একেকটি তারকা। সে কাতারে আরও একটি তারকা যুক্ত হল। তিনি হলেন উস্তাযুল উলামা ওয়াল মুহাদ্দিসীন শায়খুল হাদীস মাওলানা কুতুবুদ্দীন জালালাবাদী রহ. । কিছুদিন আগেও বাংলাদেশের চতুর্দিকে আল্লাহ ওয়ালাদের উপস্থিতি দেখা যেত। কিন্তু একে একে পরকালে পাড়ি জমানোর কারণে বাংলাদেশ কেমন যেন মুরব্বীশূন্য হয়ে পড়ছে। সৃষ্টি হচ্ছে অপূরণীয় শূন্যতা। আল্লাহ তাআলা নিজ মেহেরবানীতে ওই সকল বুযুর্গদের সঠিক উত্তরসূরী সৃষ্টি করে দিন। আমীন।

জন্ম:

১৯৩৫ সালে সিলেট জেলার কানাইঘাট থানার তালবাড়ী নামক গ্রামে এক সম্ভ্রান্ত দ্বীনী পরিবারে জন্ম গ্রহণ করেন মাওলানা কুতুবুদ্দীন। তার পিতার নাম মৌলভী আনফর আলী। পিতা তৎকালীন বৃটিশ আমলে শরহে জামী জামাত পর্যন্ত লেখাপড়া করেন। তার মাতা অত্যন্ত ইবাদতগুজার ও দ্বীনদার মহিলা ছিলেন।

প্রাথমিক শিক্ষা:

হযরত রহ.-এর পিতা দ্বীনদার ও মৌলভী হওয়ার কারণে সর্বপ্রথম শিক্ষা তিনি পিতার কাছেই গ্রহণ করেন। কিছুদিন পর গ্রামের পাশের একটি স্কুলে তাকে ভর্তি করিয়ে দেওয়া হয়। তাঁর বয়স যখন সাত/আট বছর তখন তার বাড়ির কাছেই যুগশ্রেষ্ঠ ওলিয়ে কামিল হযরত শায়েখ নিছার আলী রহ. ফয়জে আম মাদরাসা প্রতিষ্ঠা করেন। হযরত কুতুবুদ্দীন রহ. স্কুল ছেড়ে মাদরাসায় চলে আসেন। তিনি ছিলেন সে মাদরাসার প্রথম ছাত্র। তখন থেকেই তিনি হযরত নিছার আলী রহ.-এর নেক দুআ ও তাওয়াজ্জুহ লাভ করতে থাকেন। হযরত নিছার আলী রহ. একজন বড় মাপের বুযুর্গ ও অতি উচ্চস্তরের আল্লাহর ওলী ছিলেন। তার শায়খ হযরত মাওলানা আতহার আলী রহ. তাকে তাসাওউফের ক্ষেত্রে সাইয়্যিদ আহমদ কবীর রেফায়ী রহ.-এর সমপর্যায়ের মনে করতেন। এমন এক আল্লাহর ওলীর স্নেহের ছায়ায় তিনি পড়াশোনা করতে থাকেন।
নিছার আলী রহ.-এর ইন্তেকালের পর তিনি ‘ক্বাতফুসসিমার মিন হাদয়িন নিসার’ নামে উর্দূ ভাষায় তাঁর একটি জীবনী রচনা করেন। হেদায়াতুন্নাহু জামাত পর্যন্ত তিনি এখানেই পড়ালেখা করেন। পড়ালেখার প্রতি প্রবল আগ্রহ থাকায় নিছার আলী রহ. এক বছরেই তাকে হেদায়াতুন্নাহু পর্যন্ত সকল কিতাব পড়িয়ে দেন। কাফিয়া জামাত পড়ার জন্য তিনি ভর্তি হন সিলেট জেলার ঐতিহ্যবাহী দ্বীনি প্রতিষ্ঠান রানাপিং মাদরাসায়। মাদরাসাটি তার বাড়ি হতে প্রায় পাঁচ কিলোমিটার দূরে। এক বছর তিনি সে প্রতিষ্ঠানের লেখাপড়া করেন। ওই সময় তার বয়স ছিল বারো বছর। তখন তাঁর পিতা ইন্তেকাল করেন। দীর্ঘ এক বছর বাড়ি থেকে রানাপিং মাদরাসায় আসা যাওয়া করেছেন পায়ে হেঁটে। অর্থের অভাবে কোনোদিন গাড়িতে উঠেননি। অথচ সে সময় গাড়ি ভাড়া ছিল এক আনার অর্ধেক। বৃষ্টির মৌসুমে ছাতা কেনার সামর্থ্য না থাকায় কলা গাছের পাতা ব্যবহার করতেন। এ কথা অসংখ্যবার আমি তার মুখে শুনেছি। এ মাদরাসাতেই তিনি ইমামুল আসর হযরত কাশ্মিরী রহ.-এর সুযোগ্য শাগরিদ মাওলানা রিয়াছত আলী চৌঘরী রহ.-এর সোহবত লাভ করেন। তখন থেকেই তিনি হযরত আনোয়ার শাহ কাশ্মিরী রহ.-এর প্রতি দুর্বল হয়ে পড়েন। জীবনে আনোয়ার শাহ কাশ্মিরী রহ.-এর জীবনী ও মালফুয দ্বারাই তার মজলিস মুখরিত থাকত। শাহ ছাহেবের প্রতি তার মুহাব্বাতের গভীরতার প্রভাব অনুমান করা যায় যে, তার জীবনের সর্বশেষ কুরবানীতে আল্লামা আনোয়ার শাহ কাশ্মিরী রহ.-এর পক্ষ হতেও তিনি কুরবানী আদায় করেছেন। একদা আমি অধম তাকে বললাম হাদীস শরীফে এসেছে المرء مع من أحب ‘শাহ সাহেবের সাথে আপনার এত ভালোবাসা থেকে মনে হয় শাহ সাহেবের সাথেই আপনার হাশর হবে’। তখন ‘আমীন’ বলে ডুকরে কেঁদে উঠেন। রানাপিং মাদরাসায় পড়ালেখা শেষ করে ১৯৫২ সালে বাংলাদেশের তৎকালীন ইলমে দ্বীন বিতরণের প্রাণকেন্দ্র ঢাকা আশরাফুল উলূম বড়কাটরা মাদরাসায় শরহে জামী জামাতে ভর্তি হন। দাওরায়ে হাদীস পর্যন্ত তিনি এখানেই পড়ালেখা করেন। প্রখর মেধা ও মেহনতী স্বভাব থাকার কারণে অল্প সময়ের মধ্যেই তিনি আসাতিযায়ে কেরামের প্রিয়পাত্র হয়ে উঠেন। আসাতিযায়ে কেরামের খেদমতের প্রতি ছিল তার সীমাহীন আগ্রহ। এ বিষয়ে তার জীবনের অসংখ্য ঘটনার মধ্যে কেবল একটি ঘটনা উল্লেখ করছি। বায়তুল মুকাররাম মসজিদের খতীব মাওলানা ওবায়দুল হক রহ. তখন সবেমাত্র দারুল উলূম দেওবন্দ থেকে এসে বড়কাটরা মাদরাসার উস্তায হয়েছেন। সাধনা ঔষধালয়ের (গেণ্ডারিয়া) পাশে ছিল তাঁর বাসা।

তখন ওই এলাকায় পানির খুব সমস্যা ছিল। এজন্য প্রতিদিন আসর নামায পড়ে দুই কলসি পানি ভরে তিনি বড়কাটরা হতে খতীব ছাহেবের বাসায় পৌঁছে দিতেন। অথচ বড়কাটরা হতে গেণ্ডারিয়ার দূরত্ব হল প্রায় চার কিলোমিটার। অনেকবার তার মুখে শুনেছি, খতীব ছাহেবের ছোট ছোট ছেলে-মেয়েদের প্রশ্রাব পায়খানাযুক্ত কাপড় তিনি অসংখ্যবার ধুয়ে দিয়েছেন। এভাবে তিনি আসাতিযায়ে কেরামের খেদমতের জন্য নিজেকে বিলীন করেছিলেন। বড়কাটরা মাদরাসায় তার উস্তাযদের মধ্যে হযরত মাওলানা আব্দুল ওয়াহহাব পীরজী হুযুর রহ., মুফতী মুহিউদ্দীন রহ., মাওলানা মুহিব্বুর রাহমান রাহ., মাওলানা তাফাজ্জুল হক কুমিল্লায়ী রহ. ও খতীব ওবায়দুল হক রহ. প্রমুখের নাম বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য।
ইলম অর্জনের প্রতি তার ছিল সীমাহীন আগ্রহ। এ বিষয়ে একটি ঘটনার মধ্যে আমাদের জন্য রয়েছে অনেক শিক্ষণীয় বিষয়। বড়কাটরা মাদরাসায় পড়াকালীন একবার মাদরাসা বিরতিতে তিনি বাড়ি গেলেন। হঠাৎ করে সারা দেশ বন্যায় প্লাবিত হয়ে যায়। ঢাকার সাথে সারা দেশের যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে। ওই দিকে মাদরাসায় আসার দিন ঘনিয়ে আসায় তিনি চিন্তায় পড়ে গেলেন, খোলার দিন কীভাবে মাদরাসায় হাযির হবেন। চিন্তা করে তিনি যে উপায় আবিষ্কার করলেন তা মনে হলে এখনও আমার গা শিউরে উঠে। বাড়ি থেকে রওয়ানা হয়ে নৌকা যোগে তিনি সিলেট শহরে আসেন প্রায় ৩০ কিলোমিটার। সেখান থেকে পণ্যবাহী লঞ্চ যোগে চাঁদপুর এসে পৌঁছেন। চাঁদপুর হতে মালবাহী লঞ্চে আসেন নারায়ণগঞ্জে। নারায়ণগঞ্জ হতে সাড়ে সাত ঘণ্টা পায়ে হেঁটে বড়কাটরা মাদরাসায় এসে উপস্থিত হন। ওই সময় পীরজী হুযুর রহ. মাদরাসার দফতরে বসে চিন্তামগ্ন ছিলেন যে, আসাতিযায়ে কেরাম ও ছাত্ররা কীভাবে আসবে। আব্বাজান রহ.-কে দেখে আশ্চর্য হয়ে জিজ্ঞাসা করলেন ‘কীভাবে সিলেট থেকে এসেছ’? বিবরণ শুনে পীরজী হুযুর রহ.-আব্বাজানকে জড়িয়ে ধরে দুআ করতে লাগলেন। আব্বাজাান রহ. প্রায়ই বলতেন, আমার ইলম অর্জনের পথে পীরজী হুযুর রহ.-এর সেদিনের দুআ অনেক সহায়ক হয়েছে।
তাঁর ছাত্রজীবনের আরেকটি ঘটনা উল্লেখ করা জরুরি মনে করছি। তাতে বর্তমান যুগের তালিবে ইলমদের জন্য অনেক কিছু শেখার রয়েছে। আব্বাজান রহ. একবার ছাত্রদের প্রশিক্ষণ সভায় উর্দূ ভাষায় বক্তৃতা করেন। তৎকালীন বড়কাটরা মাদরাসার শিক্ষক মুফতী রহমতুল্লাহ সাহেব রহ. মন্তব্য করলেন ‘উর্দূ পুরা সহীহ হয়নি’। একথা শুনে তিনি এক সপ্তাহ খতীব ছাহেব রহ.-এর সংস্পর্শে থেকে রাতদিন মেহনত করে উর্দূ ভাষা পুরা সহীহ করে পরের সপ্তাহে বক্তৃতা করেন। বক্তৃতা শুনে মুফতী ছাহেব মন্তব্য করলেন ‘আলহামদুলিল্লাহ’ এখন উর্দূ শুদ্ধ হয়েছে’। পরবর্তী জীবনে তার উর্দূ ভাষায় রচিত ‘ক্বাতফুসসিমার’ দেখলে বুঝে আসে তার উর্দূ কত বিশুদ্ধ ও স্পষ্ট। বড়কাটরা মাদরাসা হতে দাওরায়ে হাদীস পড়ার পর ইলমের অশেষ আগ্রহ তাকে নিয়ে যায় তৎকালীন বিশ্বের শীর্ষস্থানীয় মুহাদ্দিস, জা-নাশীনে কাশ্মিরী রহ. মুহাদ্দিসুল আসর মাওলানা ইউসুফ বিন্নূরী রহ.-এর সান্নিধ্যে। হযরতের প্রতিষ্ঠিত জামিয়াতুল উলূমিল ইসলামিয়ায় তিনি আড়াই বছর পড়াশুনা করেন। মাওলানা ইউসুফ বিন্নূরী রহ.-ইতিপূর্বে শুধুমাত্র বুখারী শরীফ প্রথম খণ্ড ও তিরমিযী শরীফ প্রথম খ-ের দরস দান করতেন। আব্বাজান রহ. যেদিন প্রথম সবকে বসলেন তখন বিন্নূরী রহ.-কে একটি প্রশ্ন করেছিলেন। বিন্নূরী রহ. ওই দিন সবক থেকে গিয়ে মাদরাসার নাযিমে তালিমাতকে ডেকে বললেন, পূর্ব পাকিস্তান হতে একজন ছাত্র এসেছে। আমার মনে হয় হাদীসের বিষয়ে তার যথেষ্ট ইলম রয়েছে। এজন্য এবছর আমি পূর্ণ বুখারী ও পূর্ণ তিরমিযী শরীফের দরস দিব। বিন্নূরী রাহ-এর ধারণাই সহীহ প্রমাণিত হল। বার্ষিক পরিক্ষায় সহীহ বুখারীতে তিনি এত বেশি নম্বর পেয়েছিলেন যে, বাইরের কোনো ছাত্র ইতিপূর্বে কখনো এত বেশি নাম্বার ওই মাদরাসায় পায়নি। ফলে তাকে বিশেষ পুরস্কারে পুরস্কৃত করা হল। জামিয়াতুল উলূমে অবস্থানকালে তিনি বিন্নূরী রহ.- এর খাস খাদেম ও অত্যন্ত মুহাব্বাতের ছাত্রে পরিণত হন। হযরত বিন্নূরী রহ. তাকে খুব ভালবাসতেন। আব্বাজানের মুখে একটি কথা বারবার শুনেছি যে, দেশে পড়ালেখাকালীন তার জামা ছিল মাত্র একটি। সেই একটি জামা নিয়েই তিনি পাকিস্তান যান। বিন্নূরী রহ. ওই সময়ের ৭৫ টাকা ব্যয় করে একটি জামা ও একটি পায়জামা বানিয়ে দিলেন আব্বাজান রহ.-কে। একথা তিনি খুব আগ্রহের সাথে বর্ণনা করতেন। হযরত বিন্নূরী রহ. তাকে কত আদর করতেন, এ ঘটনা দ্বারা তা বোঝা যায়। জামিয়াতুল উলূম হতে মাসিক ভাতা বাবদ ভিনদেশী ছাত্রদেরকে আঠারো রুপি দেওয়া হত।
হযরত বিন্নূরী রহ. নিজের পক্ষ হতে আরো সাত রুপি যোগ করে আব্বাজানকে মাসিক পঁচিশ টাকা দিতেন। আব্বাজান রহ.-কেও দেখেছি তার উস্তাযদের মধ্যে হযরত বিন্নূরী রহ.-এর আলোচনা-ই সবচেয়ে বেশি করতেন। এমনকি একেবারে বৃদ্ধ বয়সেও যখন হযরত বিন্নূরী রহ.-এর নাম উচ্চারণ করতেন, প্রায় সময়ই তার চোখে পানি এসে যেত। হযরত বিন্নূরী রহ.-এর অনেক ছাত্রকে দেখার সৌভাগ্য আমার হয়েছে। কিন্তু একথা নিঃসন্দেহে বলতে পারি যে, তাঁর কোনো ছাত্রের মুখে হযরত বিন্নূরী রহ.-এর নাম এত অধিক উচ্চারিত হতে দেখিনি। কোথাও যদি তিনি সামান্য সময় বয়ান করতেন তাহলে হযরত বিন্নূরী রহ.-এর নাম কয়েক বার উচ্চারিত হত। জীবনের সর্বশেষ বয়ান করেছিলেন ফয়জে আম মাদরাসার বার্ষিক সম্মেলনে। শারীরিক অসুস্থতা ও দুর্বলতার কারণে মাত্র ছয় মিনিট বয়ান করেন। এই ছয় মিনিটে হযরত বিন্নূরী রহ.-এর নাম তাঁর মুখে উচ্চারিত হয় কয়েকবার। জীবনের প্রায় প্রতিটি কুরবানীতে তিনি হযরত বিন্নূরী রহ.-এর পক্ষ হতে কুরবানী করতেন। মাআরিফুস সুনান (১ম খণ্ড) প্রকাশিত হলে হযরত বিন্নূরী রাহ তাকে এক কপি হাদিয়া পাঠান। সে কিতাবটিকে সারাজীবন চোখের সামনেই রাখতেন। মাঝেমধ্যে তাতে চুমু খেতেন এবং বুকে জড়িয়ে রাখতেন।

কর্মজীবন:

পাকিস্তানে পড়ালেখা চলাকালীন একবার মাওলানা আতহার আলী রহ. করাচী গেলেন। তখন তাঁকে বললেন ‘দেশে ফিরে আর কোনো মাদরাসায় না গিয়ে আমার মাদরাসায় (জামিয়া এমদাদিয়া কিশোরগঞ্জ) চলে আসবে’। হযরতের কথা অনুযায়ী তিনি জামিয়াতে শিক্ষক হিসাবে নিযুক্ত হলেন। একাধারে ১৭ বছর তিনি এ জামিয়ায় শিক্ষকতা করেন। উলূমে ইসলামিয়ার সকল ফনের কিতাবাদি অত্যন্ত সুনামের সাথে দরস দান করেন। তার দরস হত অত্যন্ত প্রাণবন্ত। ছাত্ররা শুরু হতে শেষ পর্যন্ত পূর্ণ উদ্যমের সাথে সবকে উপস্থিত থাকত। তার সবকে ক্লান্ত বা আমনোযোগী হওয়ার কোনো উপায় ছিল না। দরস ছাড়া অন্য সময় তিনি কুতুবখানায় গিয়ে কিতাব মুতালাআয় ব্যস্ত থাকতেন। কিতাব মুতালাআ ছিল তার জীবনের অন্যতম প্রিয় কাজ। ‘ক্বাতফুসসিমার’ গ্রন্থের ভূমিকায় তিনি নিজেই বলেন ‘সে সময় জামিয়া এমদাদিয়ার কুতুবখানায় আট হাজার কিতাব ছিল।এমন কোনো কিতাব ছিল না, যা আমি মুতালাআ করিনি’। ইন্তিকালের সাড়ে তিন মাস আগে হঠাৎ বাড়ি থেকে ফোন এল যে, তোমার আব্বার শরীর বেশ খারাপ হয়ে গিয়েছে। ফোন পেয়ে সাথে সাথে বাড়িতে চলে যাই। গিয়ে দেখি এই অসুস্থ অবস্থায় তিনি তার শায়খ আরেফ বিল্লাহ হযরত মাওলানা শাহ হাকীম মুহাম্মদ আখতার ছাহেব রহ.-এর একটি কিতাব মুতালাআ করছেন। জীবনের শেষ সময়ে তার সবচেয়ে প্রিয় ব্যস্ততা ছিল কুরআনে কারীমের তেলাওয়াত ও আপন শায়েখের লিখিত কিতাবাদি মুতালাআ করা। জামিয়া ইমদাদিয়ায় শিক্ষকতাকালীন আসাতিযায়ে কেরামের অনেক পরামর্শ সভায় তিনি অনুপস্থিত থাকতেন। এমনকি তার কিতাব মুতালাআর আগ্রহ দেখে আতহার আরী রহ. তাকে শিক্ষক সভায় আসার জন্য কোনো প্রকার চাপ দিতেন না। শিক্ষকতার একপর্যায়ে মুক্তিযুদ্ধ শুরু হয়ে যায়। দেশ স্বাধীন হওয়ার পর আতহার আলী রহ. এবং ময়মনসিংহ বড় মসজিদের ইমাম, ফেরেশতা সিফাত বুযুর্গ, মাওলানা ফয়জুর রাহমান রহ.-এর সাথে তিনিও কারাগারে বন্দী জীবন যাপন করেন। কারাগারে রমযান মাস আসলে শরীরিক অসুস্থতার কারণে আতহার আলী রহ. এবং ফয়জুর রহমান রহ. তারাবীহ পড়ানো থেকে ওজর পেশ করেন। সকলেই চিন্তিত ছিলেন যে, মনে হয় এ বছর কুরআন খতম শুনা হবে না। কারণ সাথীদের মধ্যে আর কোনো হাফেজ ছিলেন না। আতহার আলী রহ. আব্বজানকে ডেকে বললেন ‘দেখ তুমি কুরাআন শরীফ মুখস্থ করতে পার কি না’। আব্বজান বললেন ‘আপনি দুআ করে দিন’। আল্লাহর রহমতের উপর ভরসা করে তিনি মুখস্থ করা শুরু করলেন। সারাদিন অক্লান্ত পরিশ্রম করে তিনি প্রতিদিন এক পারা মুখস্থ করতেন এবং ওই রাতে তারাবীহতে শুনিয়ে দিতেন। এভাবে মাত্র একমাসে তিনি পূর্ণ কুরআনে কারীম মুখস্থ করেন।
জামিয়া ইমদাদিয়ায় ১৭ বছর শিক্ষকতা করে তিনি চলে যান বাংলাদেশের সুপ্রসিদ্ধ দ্বীনী প্রতিষ্ঠান সিলেট শাহজালাল রহ.-এর দরগাহের সন্নিকটে অবস্থিত জামিয়া ক্বাসিমুল উলূমে। এখানেও তিনি হাদীস, তাফসীর, ফিক্হ ইত্যাদি কিতাবের দরস দান করেন এবং আরেফবিল্লাহ হযরত আকবর আলী রহ.-এর সোহবতে উপকৃত হতে থাকেন। প্রায় সাত বছর শিক্ষকতা করার পর মাদানী রহ.-এর প্রিয় শাগরিদ শাইখুল হাদীস মাওলানা জাওয়াদ রহ.-এর পরামর্শে তিনি চলে যান রাজাগঞ্জ মাদরাসায়। সেখান থেকে তিনি তার অন্যতম রাহবার, তাবলীগ জামাতের বিশিষ্ট মুরুব্বী, মাওলানা হরমুজ উল্লাহ রহ.-এর পরামর্শে নারায়ণগঞ্জ আমলাপাড়া মাদরাসায় যোগদান করেন। সেখানে তিনি দীর্ঘদিন হাদীসের দরস দান করেন। প্রায় পনের বছর তিনি এখানেই তালিবানে উলুমে নবুওতের মধ্যে ইলমে দ্বীন বিতরণ করেন। সেখান থেকে তিনি চলে যান হযরত মাদানী রহ.-এর বিশিষ্ট খলীফা, শায়খ সন্দীপী রহ.-এর প্রতিষ্ঠিত দারুল উলূম মাদানী নগর মাদরাসায়। এখানে তিনি চার বছর হাদীসের দরস দান করেন। এরপর তিনি জীবনের সর্বশেষ কর্মস্থল তার প্রিয় শায়খ আরেফ বিল্লাহ মাওলানা শাহ হাকীম মুহাম্মাদ আখতার রহ.-এর প্রতিষ্ঠিত ঢালকানগর মাদরাসায় চলে যান। চার বছর এখানে শিক্ষকতার পর তিনি অসুস্থ হয়ে বাড়িতে চলে আসেন। আট বছর তিনি বাড়িতেই অবস্থান করেন এবং অবশেষে রফীকে আলা মাহবুবে হাকীকীর সান্নিধ্য গ্রহণ করেন।
শিক্ষকতার এই দীর্ঘ জীবনের একেবারে শুরু হতেই তিনি রাসুলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর হাদীসের খেদমত অঞ্জাম দিয়েছেন এবং প্রায় চল্লিশ বছর সহীহ বুখারীর দরস প্রদান করেছেন। এ ছাড়া শিক্ষকতার এ দীর্ঘ সময়ে তিনি আরো বিভিন্ন মাদরাসায় খ-কালীন দরস প্রদান করেন। যেমন পীরজঙ্গি মাদরাসা মতিঝিল ঢাকা, কুমিল্লা দয়াপুর মাদরাসা, জামিআ ইসলামিয়া মোমেনশাহী, মারকাজুল উলূম মেজরটিলা।

তাঁর ছাত্রবৃন্দ:

শিক্ষকতার এ দীর্ঘ জীবনে বহু ছাত্র তার নিকট হতে ইলমে দ্বীন অর্জন করেছেন। তার সঠিক পরিসংখ্যান এ মুহূর্তে উল্লেখ করা কষ্টসাধ্য। উল্লেখযোগ্য কয়েকজনের নাম উল্লেখ করছি। ১. হযরত মাওলানা আতাউর রহামান খান রহ. কিশোরগঞ্জ। ২. শায়খুল হাদীস হযরত মাওলানা আনওয়ার শাহ, কিশোরগঞ্জ। ৩. শায়খুল হাদীস হযরত মাওলানা ফরিদ উদ্দিন মাসউদ। ৪. শায়খুল হাদীস হযরত মাওলানা মাহমুদুল হাসান, যাত্রাবাড়ী। ৫. হযরত মাওলানা মুফতী আব্দুল মান্নান, নায়েবে মুফতী, জামিয়া দারুল উলূম করাচী। ৬. শায়খুল হাদীস হযরত মাওলানা আব্দুল্লাহ হরিপুরী রহ.। ৭. মাওলানা আব্দুর রহমান হাফেজ্জী মোমেনশাহী। ৮. শায়খুল হাদীস হযরত মাওলানা হাফেজ মাহমুদ হুসাইন, লন্ডন। ৯. শায়খুল হাদীস হযরত মাওলানা খলিলুর রহমান, পীর সাহেব, বরুণা। ১০. মুফাসসিরে কুরআন হযরত মাওলানা নুরুল ইসলাম ওলিপুরী। ১১. বিশিষ্ট ফক্বীহ মাওলানা আবুল কালাম যাকারিয়া সুনামগঞ্জী, মুহতামিম জামেয়া দরগাহ সিলেট। ১২. বিশিষ্ট মুহাদ্দিস হযরত মাওলানা সালেহ আহমদ জকিগঞ্জী। ১৩. শায়খুল হাদীস মাওলানা মুজিবুর রহমান রাহ., মিরপুর-৬। ১৪. হযরত মাওলানা আহমদুল হক হবিগঞ্জী। ১৫. শায়খুল হাদীস মুফতি মুজিবুর রহমান ছাহেব, আঙ্গুরা মুহাম্মাদপুর সিলেট। ১৬. মাওলানা যায়নুল আবেদীন, মুহাদ্দিস, উমেদনগর মাদরাসা হবিগঞ্জ।

আধ্যাত্মিকতা:

করাচী জামিয়াতুল উলূমে পড়াকালীন ইউসুফ বিন্নূরী রহ.-এর পরামর্শে তিনি সর্বপ্রথম বায়আত হন হযরত থানভী রহ.-এর অনন্য বৈশিষ্ট্যের অধিকারী খলিফা জামিয়া আশরাফিয়া লাহোরের প্রতিষ্ঠাতা মুফতী হাসান অমৃতসরী রহ.-এর হাতে। তাঁর ইন্তেকালের পর হাকীমুল ইসলাম কারী তায়্যিব ছাহেব রহ.-এর হাতে তিনি বায়াআত গ্রহণ করেন। কারী ছাহেব রহ.-এর ইন্তেকালের পর তিনি ময়মনসিংহ বড় মসজিদের ইমাম বিশিষ্ট বুযুর্গ মাওলানা ফয়জুর রহমান রহ.-এর হাতে বায়আত হন এবং তাঁর নিকট হতে খেলাফত লাভ করেন। তাঁর ইন্তেকালের পর তিনি বিশ্ববিখ্যাত বুযুর্গ আরেফ বিল্লাহ মাওলানা শাহ হাকীম মুহাম্মাদ আখতার সাহেব রহ.-এর হাতে বায়আত গ্রহণ করেন এবং প্রথম সাক্ষাতের কিছুদিন পরই খেলাফত লাভে ধন্য হন। এ ছাড়া দাওয়াত ও তাবলীগের বিশিষ্ট মুরুব্বী ওলিয়ে কামিল মাওলানা হরমুজুল্লাহ রাহ.ও তাকে খেলাফত দান করেন। এত বুযুর্গের খলীফা হওয়ার পরও নিজেকে তিনি এমনভাবে মিটিয়ে ছিলেন যে কোনোদিন কাউকে বুঝতেও দেননি, তিনি যে একজন শায়েখে কামিল। অসংখ্যবার দেখেছি অনেক আলিম তার কাছে বায়আত হওয়ার আগ্রহ পেশ করেছেন। আর তিনি কবুল না করে অন্য কোনো হক্কানী পীরের নাম বলে তার নিকট বায়আত হওয়ার হুকুম দিয়েছেন। এত কিছুর পরও কিছু আলিম তার পিছনে এমনভাবে জুড়ে ছিলেন যে, তাদেরকে বায়আত না করে পারেননি। তন্মধ্যে আমার জানা মতে কেবলমাত্র তিনজনকেই তিনি খেলাফত দান করেছেন।

জামাতের প্রতি গুরুত্ব:

আল্লাহর কিছু বান্দা আছেন, আযানের ধ্বনি যাদের হৃদয় জগতে ঝড় তোলে। আযান শুনে তাঁরা ঘরে বসে থাকতে পারেন না, ছুটে যান মসজিদে। তাঁরা ঘরে থাকেন, কিন্তু তাঁদের হৃদয় থাকে মসজিদে। মসজিদই তাঁদের ঠিকানা। আব্বাজান রহ. এমনই ছিলেন; আযান হলেই সকল ব্যস্ততা রেখে হাযির হয়ে যেতেন মসজিদে। লাব্বাইক ইয়া রাব, বান্দা হাযির। শত ব্যস্ততাও তাকে ঘরে ধরে রাখতে পারত না । বরং অনেক সময় আযানের আগেই হাযির হয়ে যেতেন মসজিদে। আমার বুঝ হওয়ার পর থেকে তাকে আমি এমনই দেখছি। জামাত তো দূরের কথা তাকবীরে উলাও কখনো ছুটত না এবং সফরে হযরে জীবনে কখনো তাকে আমি মাসবুক হতে দেখিনি।

রাজনীতি ও সামাজিক জীবন:

পাকিস্তান আমলে মাওলানা আতহার আলী রহ.-এর নেতৃত্বে কিছুদিন তিনি নেজামে ইসলামের সদস্য ছিলেন। বাংলাদেশ হওয়ার পর তিনি সক্রিয় রাজনীতি থেকে নিজেকে সম্পূর্ণ আলাদা করে ফেলেন। হাফেজ্জী হুযূর রহ.-এর খেলাফত আন্দোলনের সময় তিনি তাতে অগ্রণী ভূমিকা রাখেন। এর পরে আর কখনো তিনি কোনো রাজনৈতিক দলের সাথে সম্পর্ক রাখেননি। আমি কোনো দিন তাকে কোনো রাজনৈতিক সভায় অংশগ্রহণ করতে দেখিনি। ঢাকায় বিভিন্ন রাজনৈতিক প্রোগ্রাম হত, কিন্তু তিনি মাদরাসায় বসে যিকির আযকার বা কিতাব মুতালাআ অথবা ছাত্রদেরকে সময় দেওয়ার কাজে ব্যস্ত থাকতেন। ওই প্রোগ্রামে অংশগ্রহণ করা না করা সম্পর্কে প্রশ্ন করা হলে তিনি মুচকি হেসে বলতেন, ভাই আমি ছোট মানুষ! রাজনীতি করা বড়দের কাজ। আমি ওগুলো বুঝি না’। বাংলাদেশ কওমী মাদরাসা শিক্ষাবোর্ড বেফাকুল মাদারিসিল আরাবিয়া প্রতিষ্ঠা হলে দুইবার ১৪০৬ হিজরী ও ১৪০৯ হিজরীতে তিনি কেন্দ্রীয় পরীক্ষা নিয়ন্ত্রকের দায়িত্ব পালন করেন। এছাড়া মাদরাসায়ে নিছারিয়া ফয়েজে আমের আজীবন প্রতিটি মসলিসে শুরায় তিনিই সভাপতির দায়িত্ব পালন করতেন। আল ইখওয়ান পরিষদের প্রতিষ্ঠা হতে আমৃত্যু এর পৃষ্ঠপোষক ছিলেন। ইসলামিক ফাউন্ডেশন হতে প্রকাশিত সহীহ বুখারী ও সহীহ মুসলিমের অনুুবাদের দুই পারা তার অনূদিত। খুতবাতে হাকীমূল ইসলামও তিনি অনুবাদ করেন। এছাড়া হযরত আল্লামা আনোওয়ার শাহ কাশ্মীরী রহ.-এর জীবনী গ্রন্থ ‘নক্বশে দাওয়ামে’র অধিকাংশ অনুবাদ তিনিই করেছেন। পাকিস্তান আমলে উর্দূ ভাষার নিয়ম কানুন সম্বলিত একটি সমৃদ্ধ গ্রন্থ রচনা করেছিলেন। কিন্তু ৭১ এর মুক্তিযুদ্ধের সময় তা হারিয়ে যায়। কিতাবটি প্রায় দেড়শত পৃষ্ঠা সম্বলিত ছিল। পরবর্তী জীবনে তা আর সংকলন করা হয়নি। এ ছাড়া তিনি আর মৌলিক কোনো গ্রন্থ রচনা করেননি।

অসুস্থতা ও ইন্তেকাল:

১৪২৬ হিজরীতে ঢালকানগর মাদরাসার শায়খুল হাদীস থাকাকালীন জুমাদুল উখরা মাসের ২৭ তারিখ মারাত্মক অসুস্থ হয়ে পড়েন। ল্যাব এইড হাসপাতালে চিকিৎসা গ্রহণ করে সিলেট চলে যান। এরপর হতে শারীরিকভাবে অনেক দুর্বল হয়ে পড়েন। এরপর বিভিন্ন সময় বিভিন্ন ডাক্তার ও হাসপাতাল হতে চিকিৎসা গ্রহণ করেন। সর্বশেষ ৯ই সফর ১৪৩৫ হিজরী শুক্রবার সকাল হতে অজ্ঞান হয়ে যান। কেবল মাত্র জোরে জোরে শ্বাস গ্রহণ করছিলেন। শরীরে কোনো অনুভূতি বাকি থাকেনি। তবে প্রতিটি শ্বাসের সাথে আল্লাহ আল্লাহ জিকির শোনা যাচ্ছিল। ১০ই সফর শনিবার সকালে তাকে সিলেট উইমেন্স হাসপাতালে নেওয়া হয়। কিডনি বিভাগ সেখানে না থাকায় নর্থ ইস্ট হাসপাতালে নেওয়া হয়। কিছু সময় তাকে আই সি ইউতেও রাখা হয়। ডাক্তারদের মুখে নৈরাশ্যের কথা শুনে মাগরিবের পর তাকে আবার বাড়িতে নিয়ে যাওয়ার জন্য রওয়ানা হই। তখনও প্রতিটি শ্বাসের সাথে জিকির শোনা যাচ্চিল। মির্জাগড় পৌঁছার পর দেখতে পেলাম, শ্বাস নিতে তার কষ্ট হচ্ছে। তখন আমি তার বুকের পাশে বসে মুনাজাত শুরু করে দিলাম। মুনাজাত শেষ করে সুরা ইয়াসিন তেলাওয়াত শুরু করলাম। রাজাগঞ্জ দারুল হাদিস মাদরাসার নিকটে আসার পর তার পরম প্রিয় মাহবুব আল্লাহ পাকের পক্ষ হতে ডাক এসে যায়। সে ডাকে সাড়া দিয়ে এ নশ্বর পৃথিবীর মায়া ছেড়ে তিনি মালাকুল মাউতের ডাকে সাড়া দেন। সে দিন ছিল ১০ই সফর ১৪৩৫ হিজরী ১৪ই ডিসেম্বর ২০১৩ ঈ. শনিবার রাত ৮টা। বিশ্বজগৎ হতে আরো একটি তারকা খসে পড়ল। যে তারকা অর্ধ শতাব্দী ‘ক্বালা রাসূলুল্লাহ’এর খেদমত আঞ্জাম দিয়েছে। পরদিন ফয়জে আম মাদরাসা সংলগ্ন মাঠে তাঁর নামাযে জানাযা হয়। স্থানীয় কবরস্থানে তাঁকে দাফন করা হয়। আল্লাহ তাআলা তার কবরকে নূর দ্বারা ভরপুর করে দিন এবং জান্নাতুল ফেরদাউসের উচ্চ মাকাম দান করুন। মৃত্যুর সময় তিনি তাঁর সহধর্মিনী, পাঁচ ছেলে ও দুই মেয়ে রেখে যান। আল্লাহ তাআলা তাদের সবাইকে হায়াতে তায়্যিবা দান করুন। হযরত রহ.-এর জীবনী সম্বলিত একটি স্মারকগ্রন্থ প্রকাশের ইচ্ছা রয়েছে। পাঠকবৃন্দের নিকট দুআর আবেদন করছি। আল্লাহ তাআলা যেন সহজ করে দেন, কবুল করেন। আমীন।

লেখক: হযরত মাওলানা কুতুবুদ্দীন রহ.-এর সাহেবজাদা।

Spread the love