মাওলানা মুফতি শহীদুল ইসলাম রহ. -এর জীবন ও কর্ম
June 25 2023, 06:49
বাংলাদেশি দেওবন্দি স্কলার হাফেজ মাওলানা মুফতি শহিদুল ইসলাম (১৯৬০-২০২৩) (রহ.) ছিলেন একাধারে পীরে কামেল, প্রখ্যাত রাজনীতিবিদ, নড়াইল-২ আসনের সাবেক সফল ও অনন্য এমপি।
তিনি ছিলেন বাংলাদেশের প্রধানতম মোখলেস সেবাদানকারী, জনদরদি, খাদেমে মিল্লাত। আল-মারকাজুল ইসলামী নামক ইসলামী এনজিও -এর মাধ্যমে তিনি সারাদেশব্যাপী ধর্ম বর্ণ নির্বিশেষে যে সেবা দান করে গেছেন, তা পৃথিবীর মানব ইতিহাসে এক অতুলনীয় উজ্জ্বল ও নজিরবিহীন দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে।
একজন জনদরদী, সমাজসেবী, নিঃস্বার্থ, ত্যাগী, নীতি ও নিষ্ঠাবান মানুষ বাংলাদেশ লাভ করে ধন্য হয়েছে। শিক্ষা, চিকিৎসা, সমাজসেবা, দীনের প্রচার ও প্রসারে মুফতী শহীদুল ইসলাম একজন অনন্য ব্যক্তি। মুফতি শহিদুল ইসলাম রহ. বাংলাদেশের আলেম সমাজে অত্যন্ত সুপরিচিত একটি নাম। কোটি মানুষের হৃদয়ের স্পন্দন, অসাধারণ মেধা ও প্রতিভার এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত। যোগ্যতা ও কর্ম দক্ষতায় একজন প্রবাদ পুরুষ। আকাবিরে দেওবন্দের চেতনাধারী কর্মোদ্যমী, আত্মত্যাগী ও আত্মবিশ্বাসী এক মনীষীর নাম। আর্তমানবতার সেবায় নিবেদিত প্রাণ। তিনি বৈচিত্র্যময় গুণাবলী সম্পন্ন এক বিরল ব্যক্তিত্ব। যার চরিত্রে ছিল সিদ্দিকি উদারতা, ওমরি সাহসিকতা, ওসমানী লাজুকতা ও আলীর বিচক্ষনতা।
জন্ম: ১৯৬০ সালের ১৫ই মার্চ স্মৃতি বিজড়িত, পদ্মা নদী বিধৌত, ঢাকা বিভাগের অন্তর্গত, ফরিদপুর জেলাধীন কোতোয়ালী থানার পূর্ব খাবাসপুর গ্রামের এক সম্ভ্রান্ত মুসলিম সরদার পরিবারে তিনি জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতার নাম মোহাম্মদ শামছুল হক সরদার ও মাতা মোসাম্মাৎ আনোয়ারা বেগম। দাদা আব্দুল ওয়াহেদ সরদার। তিনি ছিলেন তৎকালীন সময়ে একজন জনদরদী সরদার বংশীয় বিচক্ষন ব্যক্তিত্ব।
বাল্যকাল: তাঁর পিতা ছিলেন এক সৎ নিষ্ঠাবান ব্যক্তিত্ব। স্বাধীনতার সময়ে তিনি ছিলেন একজন সক্রিয় কর্মী। তাঁর মাতা ছিলেন একজন সতী-সাধ্বী, পর্দানশীল, কুরআন প্রেমিকা রমনী। কুরআনের প্রতি ছিল তার অগাধ ভালোবাসা। গৃহস্থালী কার্যাবলী সম্পাদনের সময় তাঁর মুখে থাকতো গুনগুন স্বরে কুরআনের ছোট ছোট সূরার তিলাওয়াত। স্থানীয় মহিলাদের মাঝে তিনি ছিলেন অনন্য।
শিক্ষা জীবন: ছোট বেলা থেকেই তিনি ছিলেন অসাধারণ মেধা ও প্রতিভার অধিকারী। তাঁর মেধা এতো তীক্ষ্ণ ও প্রখর ছিল যে, তার মায়ের কাছ থেকে শুধু শুনে শুনেই কুরআনে কারীমের কয়েক রুকু মুখস্থ করে ফেলেন। তাঁর মেধার প্রখরতা দেখে তাঁর পিতা-মাতা বিস্ময়ে অভিভূত হয়ে পড়েন। ফলে তারা ছেলেকে হিফজ পড়ানোর সিদ্ধান্ত নেন। মুজাহিদে আযম আল্লামা শামসুল হক ফরিদপুরী রহ. -এর পরিবারের সাথে ছিল তাঁদের মধুর সম্পর্ক। সে সুবাদে পূর্ব সিদ্ধান্ত মোতাবেক ১৯৭২ সালে তারা তাঁকে গওহরডাঙ্গা মাদরাসায় ভর্তি করান। অল্প দিনেই তিনি উস্তাদদের প্রিয় পাত্র হয়ে উঠেন। অতঃপর ১৯৭৫ সালে কৃতিত্বের সাথে হিফজ সম্পন্ন করেন। হিফজ সমাপনের পর তাঁর জীবনে নেমে আসে মহা পরীক্ষা। তাঁর পিতা যেহেতু সাধারণ শিক্ষায় শিক্ষিত ছিলেন, তাই ইচ্ছা ছিল তার আদরের দুলালও সাধারণ শিক্ষায় শিক্ষিত হবে এবং ডাক্তার/ইঞ্জিনিয়ার হবে। কিন্তু তিনি যে ছিলেন হাফেজে কুরআন, বক্ষে ছিল পবিত্র কুরআন। তিনি যে গ্রহণ করেছিলেন হেরার জ্যোতি। তাই তার অদম্য মনোবাসনা ছিল আলেম হওয়া, জাতির কাণ্ডারি হওয়ার। তাই সবকিছু ফেলে তিনি পুনরায় গহরডাঙ্গা মাদরাসায় উর্দূ ও ফার্সী বিভাগে ভর্তি হন এবং সফলতার সঙ্গে কোর্স সম্পন্ন করেন।
পরবর্তীতে তাঁর পরিবার তাঁকে কামরাঙ্গীরচর মাদরাসায় ভর্তি করান। সেখানে তিনি মাওলানা আজিমুদ্দীন সাহেবের একান্ত খাদেম ছিলেন। তিনি তাকে নিজ ছেলের মতো স্নেহ করতেন। মায়া মমতার পাশাপাশি মৃদু শাসনও করতেন। কামরাঙ্গীরচর অধ্যয়ন শেষে তিনি ভর্তি হন তখনকার সুনামধন্য প্রতিষ্ঠান জামিয়া কুরআনিয়া লালবাগ মাদরাসায়। লালবাগ তখন বড় বড় আলেম উলামাদের পদভারে মুখরিত থাকতো সবসময়। লালবাগে কিছুদিন পড়ালেখা করার পর উস্তাদদের পরামর্শ ও তত্ত্বাবধানে পাড়ি জমান বিননূরী টাউন জামিয়াতুল উলুম আল ইসলামিয়া করাচীতে এবং ধারাবাহিকভাবে ১৯৮৬ইং শিক্ষাবর্ষে দাওরায়ে হাদীস সমাপন করেন। বিননূরী টাউনে অধ্যয়নরত সময়ে তার প্রিয় উস্তাদদের মধ্যে অন্যতম ছিলেন আল্লামা ওলী হাসান টুনকী, মাওলানা ইদ্রিস মিরাটি, আল্লামা আব্দুস সালাম চাটগামী প্রমূখ। দাওরায়ে হাদীস সমাপ্ত করার পর উস্তাদদের পরামর্শক্রমে তিনি পাকিস্তানের বিননূরী টাউনে ইফতা বিভাগে ভর্তি হন এবং ইসলামী আইন অনুষদ সমাপ্ত করেন।
ইসলামী ওয়েলফেয়ার সোসাইটি প্রতিষ্ঠা: ১৯৮৮ সাল। তিনি তখন ইফতা বিভাগের শিক্ষার্থী। প্রবল বৃষ্টি বর্ষণে বাংলাদেশ তখন বন্যার পানিতে ডুবন্ত। দেশের লাখ লাখ মানুষ বন্যা কবলিত। তখন তিনি পাকিস্তানে থাকলেও দেশের এ করুণ পরিস্থিতি তাকে অনেক পীড়া দিচ্ছিল। তিনি মানুষকে কিভাবে সাহায্য করা যায় তার জন্য চিন্তিত হয়ে পড়েন। পরিশেষে দেশের মানুষের জন্য সাহায্যের আবেদন নিয়ে নেমে পড়েন, পাকিস্তানের পথে পথে ঘুরে বেড়ান মানুষের দ্বারে দ্বারে। দেশের মানুষের কাছে ত্রাণ সামগ্রী পৌঁছানো ও দেশের গরীব দুঃখী মানুষের পাশে দাঁড়ানোর লক্ষ্যে দৃঢ় প্রত্যয় নিয়ে প্রতিষ্ঠা করেন ইসলামী ওয়েলফেয়ার সোসাইটি । তিনি ছিলেন প্রতিষ্ঠাতা। তখনকার সময়ে করাচীর বিননুরী টাউনে পড়ুয়া বাঙ্গালী ছাত্রদের মধ্যে মারকাযুদ দাওয়াহ আল ইসলামিয়া বাংলাদেশ এর আমীনুত তালীম মাওলানা আব্দুল মালেক সাহেব (দা.বা.) ছিলেন এই সোসাইটির ক্যাশিয়ার। এছাড়া মাওলানা ইউসুফ ভবানীপুরী ছিলেন অন্যতম সদস্য। তিনি অনেক অক্লান্ত পরিশ্রম ও প্রচেষ্টায় বন্যার্তদের জন্য অনেক ত্রাণ সংগ্রহ করতে সক্ষম হন। এরপর তিনি ত্রাণ বিতরণের জন্য ছুটে আসেন নিজ দেশে। তখন ত্রাণ বিতরণে অন্যতম সঙ্গী ছিলেন পাকিস্তানের বিশিষ্ট আলেম মাওলানা মুফতী আব্দুল্লাহ শামী ও মাওলানা মুফতী নাইম সাহেব।
বিবাহ: তাঁর মাতা সবসময় দোয়া করতেন তার পুত্রবধু যেন একজন কুরআনের হাফেজা হয়। তিনি সবসময় একজন হাফেজা গুণবতী মেয়ের খোঁজ করতেন। আল্লাহ তা’আলার অশেষ কৃপায় তিনি পেয়ে যান তার কাঙ্খিত কন্যা এবং প্রিয় দুলালের কাছে এ ব্যাপারে তার সম্মতি জানতে চান। ছেলের সম্মতি পেয়ে তিনি আনন্দে আত্মহারা। তাই দেরী না করে তার বিবাহ সম্পন্ন করেন। তাঁর দুই পুত্র ও চার কন্যা।
আল-মারকাজুল ইসলামী প্রতিষ্ঠা: ছোট বেলা থেকেই তিনি ছিলেন দেশ প্রেমিক, দেশের জনগণের প্রতি ছিল তার অকৃতিম মায়া। দেশের মানুষের দুঃখ দুর্দশায় তার দিল সর্বদা কাঁদতো, তিনি সবসময় রাসূলের ঐ হাদীসটি স্মরণ করতেন- ওহী অবতীর্ণ হওয়ার পর রাসূল (সা.) ভয় পেলে খাদীজা (রা.) তাকে সান্ত্বনা দিয়ে বলেছিলেন- প্রিয় আমার, আপনি চিন্তা করবেন না। আল্লাহ আপনাকে ধ্বংস করবেন না। আপনি তো আত্মীয়-স্বজনের সাথে সদাচারণ করেন, অসহায় দুঃস্থদের সাহায্য করেন, নিঃস্বদের সহযোগিতা করেন, মেহমানের আপ্যায়ন করেন, হক পথে দুর্দশাগ্রস্থদের প্রতি হাত বাড়িয়ে দেন। রাসূল (সা.) এর এই হাদীসে উদ্ধুদ্ধ হয়ে ১৯৮৮ সালে আর্ত মানবতার সেবার জন্য প্রতিষ্ঠা করেন “আল-মারকাজুল ইসলামী”। তখন মারকাজের নামকরণ করে পাকিস্তানের বিশিষ্ট আলেমে দ্বীন ড. আব্দুর রাজ্জাক এস্কান্দার। প্রথম দিকে তাঁর পাশে দাঁড়ানোর মতো লোকজন ছিল একেবারে নগন্য। ছিলনা অর্থের বিশাল কোন ফান্ড। তাই অনেক কষ্ট করে একটি এম্বুলেন্সের ব্যবস্থা করেন।
পরবর্তীতে তার রক্ত, ঘাম আর নিরলস প্রচেষ্টার উপর গড়ে উঠে আজকের আল-মারকাজুল ইসলামী। বাবার পর বর্তমানে আল-মারকাজুল ইসলামী এএমআই –এর চেয়ারম্যান তাঁর ছোট সাহেবজাদা হাফেজ মাওলানা হামযা শহিদুল ইসলাম।
আল-মারকাজুল ইসলামীর অবদান: প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকেই দেশ ও জনগণের উপর আল-মারকাজুল ইসলামীর অবদান ছিল অপরিসীম। ১৯৯১ সালে বাংলাদেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষ যখন বন্যা কবলিত, তখন তিনি ত্রাণ নিয়ে ছুটে যান মানুষের দুয়ারে। প্রতিটি মাদরাসায় পৌঁছে দেন খাদ্য, বস্ত্র সহ প্রয়োজনীয় পণ্য-সামগ্রী। ১৯৯২ সালে আরাকানের মজলুম রোহিঙ্গারা নিজ দেশ থেকে বিতাড়িত হয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় গ্রহণ করলে তিনি ছুটে যান কক্সবাজারে, পৌঁছে দেন তাদের কাছে বিপুল ত্রাণ সামগ্রী। তাদের ছেলে মেয়েদের শিক্ষা ও সেবা প্রদানের লক্ষ্যে কক্সবাজারে প্রতিষ্ঠা করেন একটি মাদরাসা। এছাড়াও বাংলাদেশের মানুষের শত দুর্যোগে মুষ্ঠিবদ্ধ হাতে তাদের পাশে দাড়ান।
বিশেষত: ২০১৭ সালে পুনরায় রোহিঙ্গারা বাংলাদেশে আশ্রয় নিলে তখন থেকে তাদের প্রতি মারকাজের অবদান রয়েছে বর্ণনাতীত।
আল-মারকাজুল ইসলামীর বহুমুখী প্রকল্পসমূহ: দেশের মানুষকে সেবা প্রদানের লক্ষ্যে আল-মারকাজুল ইসলামী হাতে নিয়েছে বহুমূখী প্রকল্প, তন্মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো- ১। এম্বুলেন্স সার্ভিস ও লাশবাহী গাড়ি: গরীব দুঃখী রোগীদের বিনা খরচে আর বিত্তশালী রোগীদের কাছ থেকে নাম মাত্র খরচ নিয়ে সেবাদানের লক্ষ্যে এবং লাশবহনের কাজে নিয়োজিত রয়েছে অর্ধশতাধিক এম্বুলেন্স ও লাশবাহী গাড়ী। এছাড়াও রয়েছে ফ্রি লাশ গোসলখানা, যার মাধ্যমে ইতিমধ্যে ৫০,০০০ (পঞ্চাশ হাজার) এর অধিক লাশকে ফ্রি গোসল এর ব্যবস্থা করা হয়েছে।
২। মসজিদ স্থাপন: জনগনের চাহিদা ও প্রয়োজন অনুসারে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে আল-মারকাজুল ইসলামী নির্মাণ করে দিয়েছে ৩৫০ এর বেশী মসজিদ।
৩। নলকুপ স্থাপন: পল্লী অঞ্চলের গরীব জনসাধারনের মাঝে বিশুদ্ধ পানি সরবরাহের জন্য গভীর/অগভীর নলকুপ স্থাপন করা হচ্ছে। এ যাবত ১১০০টির অধিক গভীর নলকুপ ও ত্রিশ হাজারের অধিক নলকুপ স্থাপন করা হয়েছে।
৪। আল-মারকাজুল ইসলামী হাসপাতাল: আল্লাহ তায়ালার অশেষ মেহেরবানীতে আল-মারকাজুল ইসলামী দেশের গরীব-দুঃখী নির্বিশেষে সকলের চিকিৎসা সেবা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে দেশের প্রাণকেন্দ্র ঢাকায় স্থাপন করেছে একটি জেনারেল হাসপাতাল। যা হাজার হাজার মানুষকে স্বল্পমূল্যে চিকিৎসা সেবা দিয়ে আসছে। তা ছাড়া “লাভলী স্মাইল”নামে একটি প্রকল্প প্রতিষ্ঠিত হয় যার মাধ্যমে ঠোঁট কাটা, নাক ও তালু কাটা অবস্থায় জন্ম নেওয়া প্রতিবন্ধী শিশুদেরকে অপারেশন নিশ্চিত করা হয়। প্রতিবছর এখান থেকে ৫০০জনের ফ্রি অপারেশন করানো হয়।
৫। আল-মারকাজুল ইসলামী চক্ষু হাসপাতাল: আল-মারকাজুল ইসলামী চক্ষু হাসপাতাল নামে একটি হাসপাতাল প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে এবং চোখের রোগীদের বিনামূল্যে ছানী অপারেশনসহ যথাযথ চিকিৎসা সেবা প্রদান করে আসছে। এ যাবত প্রায় ত্রিশ হাজারেরও অধিক রোগীকে চিকিৎসা দেয়া হয়েছে।
৬। মাদরাসা প্রতিষ্ঠা: ইসলামী শিক্ষা প্রদানের লক্ষ্যে দেশের বিভিন্ন জায়গায় আল-মারকাজুল ইসলামী প্রতিষ্ঠা করেছে ১০টি আবাসিক বালক মাদরাসা ও ২টি আবাসিক বালিকা মাদরাসা। উক্ত মাদরাসাগুলিতে ৫০০০ জন ছাত্র ও ১৯০০ জন ছাত্রী লেখা-পড়া করছে। এছাড়াও রয়েছে ২টি অন্ধ হিফজুল কুরআন মাদরাসা। যা বাংলাদেশে সর্ব প্রথম ব্রেইল পদ্ধতিতে অন্ধ প্রতিবন্ধি ছাত্র/ছাত্রীদের জন্য কুরআন কারীম হিফজ করা ও হাতে-কলমে দ্বীনি ইলম অর্জন করার সুযোগ। বর্তমানে অন্ধ মাদরাসার ছাত্র সংখ্যা ২৫জন। এছাড়াও অত্র প্রতিষ্ঠানের রয়েছে সেলাই মেশিন বিতরণ, কুরবানী (প্রোগ্রাম, ইফতারী-সেহরী বিতরণ, বিবাহ কমসূচী, হজ্জ্ব পালনসহ জারো অনেক প্রকল্প যার প্রতিটিই সেবা দানের অঙ্গনে সক্রিয় ও সরব।
আল-মারকাজুল ইসলামীতে সাইয়্যেদ আবুল হাসান আলী নদভীর শুভাগমন: ১৯৯৩ইং সনে বিশিষ্ট দাঈ ও গবেষক, সাইয়্যেদ আবুল হাসান আলী নদভী রহ. বাংলাদেশ সফরে আসেন। তখন মুফতী সাহেবের দিলের তামান্না ছিল হযরত নদভী রহ. একটি বার মারকাজে আসবেন এবং দোয়া দিয়ে যাবেন। কিন্তু অনেক চেষ্টা সত্ত্বেও তিনি কোন পোগ্রাম নিচ্ছিলেন না। অবশেষে অনেক কষ্টে এ আশ্বাস পেলেন যে, একদিন সকালে শুধুমাত্র নাস্তা করবেন। আর এ দ্বারাই সুপ্রসন্ন হয়ে যায় তার ভাগ্যের দোয়ার। হযরত সাইয়্যেদ আবুল হাসান আলী নদভী (র.) একদিন মারকাজে আসলেন। মারকাজের কার্যক্রম শুনে অভিভূত হয়ে প্রাণভরে দোয়া করেন এবং কয়েকদিন অবস্থান করেন। আল-মারকাজুল ইসলামীতে মসজিদুল হারামাইন ও শরীফাই এর এবং কুরাইশ বংশীয় শাইখগণের শুভাগমন : বিশিষ্ট দাঈ ও গবেষক মসজিদুল হরামাইন ও শরীফাইন এর ইমাম শাইখ ডক্টর আব্দুল ওয়াছে আঁল বাবাকাত, মোহাম্মদ মক্কি হিজাজী, ডক্টর আলী আল হাকাভী, ডক্টর খালেদ আল-কুরাইশী, শাইখ ইব্রাহীম আল-আখজার এবং রাবেতার সাবেক আমীনুল-আ’ম শাইখ আব্দুল উমর নাছিফ প্রমুখ শুভাগমন করেছিলেন। রাজনীতি ও রাজপথে পদার্পন: ১৯৯৮ সালে কাদিয়ানীদের তৎপরতা বেড়ে গেলে তিনি ঝাঁপিয়ে পড়েন “খতমে নবুওয়াত আন্দোলনে,” চালিয়ে যান সংগ্রাম। যার ফলে তিনি অন্যায়ভাবে কারাবদ্ধ হন। জেলে থাকাবস্থায় তাঁর বড় ভাই বীর মুক্তিযোদ্ধা সাহাবুদ্দিন মিন্টু তাকে দেখতে যেতেন। একদিন তার ভাই তাকে রাজনীতিতে যোগ দেওয়ার আহবান জানান এবং তাকে উদ্বুদ্ধ করেন।
কিন্তু রাজনীতিতে তার অনাগ্রহ থাকাতে এক পর্যায়ে পীড়াপীড়ি শুরু করেন এবং সফল হন। ফলে ২০০১ সালে শায়খুল হাদীস আল্লামা আজিজুল হক রহ. এর হাত ধরে রাজনীতিতে পদার্পন করেন এবং অল্পদিনেই পরিণত হন ইসলামী অঙ্গনের এক অবিসংবাদিত নেতা হিসাবে। নির্বাচিত হন খেলাফত আন্দোলনের নায়েবে আমীর। তাঁর সমকালে খেলাফত আন্দোলনের ছিল পূর্ণ যৌবনা। সকল সভা-সমাবেশ ও আন্দোলনে তার অবদান ছিল অনস্বীকার্য। ২০০৬ সালে ১৬ আগষ্ট কওমী সনদের স্বীকৃতির জন্য শায়খুল হাদীস (র.) মুক্তাঙ্গনে অংশগ্রহণ করলে তিনি এতে বিরাট ভূমিকা পালন করেন। সকল আন্দোলনকারীদের খাবারের ব্যবস্থা করেন। এছাড়াও জাতির প্রতিটি সমস্যায় তিনি ছিলেন রাজপথের অগ্রসেনানী, ইলায়েকালিমাতুল্লাহ এর একজন জানবাজ মর্দে মুজাহিদ। সংসদ নির্বাচনে অংশগ্রহণ ও নিরঙ্কুশ বিজয়: ২০০১ সালে জাতীয় ঐক্যজোট থেকে ধানের শীষ প্রতীকে নড়াইল-২ (সদর, লোহাগড়া) আসন থেকে নির্বাচন করেন। তিনি তখন তার প্রতিদ্বন্দ্বী তৎকালীন বিরোধী দলীয় প্রার্থীকে পরাজিত করেন এবং পাঁচ বছর সংসদ সদস্য ছিলেন। মুক্তিযুদ্ধেও তিনি: ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন তিনি মাত্র ১১ বছরের বালক।
কিন্তু তার বড় ভাই শাহাবুদ্দিন সরদার মিন্টু যেহেতু মুক্তিবাহিনীর একজন সদস্য ছিলেন, যার ফলে ছোট বেলাতেই তার ভাই তাকে বিভিন্ন উৎসাহ উদ্দীপনা দিয়ে মুগ্ধ করতেন। মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন সময়ে তিনি তার বড় ভাই ও তার সহযোদ্ধাদের জন্য খাবার ও পানিয় সরবরাহ করতেন। ফের জেলে: ২০০৬-০৭ সালে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে তিনি ফের কারাবদ্ধ হন। তখন দেশের আওয়ামী-বিএনপির অনেক নেতা-নেত্রীকেও কারাবদ্ধ হতে হয়। তিনি জেলে গিয়েও দমে যায়নি। বরং কারাবাসী নেতা-নেত্রীদের মাঝে শুরু করেন দ্বীনের দাওয়াত, কুরআন ও দ্বীনি মাসআলা-মাসায়েল শিক্ষা। যার ফলে অনেকেই নামাজী হয়ে যান। মৃত্যু: মফতি শহিদুল ইসলাম রহিমাহুল্লাহ ২০২৩ সালের ২৭ জানুয়ারি মানিকগঞ্জে মৃত্যুবরণ করেন। সেদিন বায়তুল মোকাররম মসজিদে তার জানাজার নামাজ অনুষ্ঠিত হয়, যাতে মসজিদুল আকসার ইমাম আলী ওমর ইয়াকুব আল আব্বাসী ইমামতি করেন। কেরানীগঞ্জের জামিয়াতুল উলুম আল ইসলামিয়া মাদ্রাসা প্রাঙ্গণে তাকে দাফন করা হয়।
Nazmul Hasan Sakib
Call: +88 01739-691875 E-mail: nazmulh@amibd.org