মুফতি মুহাম্মদ ওয়াক্কাস রহ. এর জীবন ও কর্ম
October 21 2019, 09:44
নাম :- মুহাম্মাদ ওয়াক্কাস
জন্ম / জন্মস্থান :- হযরত মুফতি মুহাম্মদ ওয়াক্কাস সাহেব রহ. বাংলাদেশের সর্বপ্রথম ও সর্বপ্রাচীন জেলা যশোরের মনিরামপুর থানার বিজয়রামপুর গ্রামে 15 জানুয়ারি1948সাল মুতাবিক1 মাঘ 1350 বাংলা রোজ শুক্রবার জন্মগ্রহণ করেন তিনি দুই বোন ও এক ভাইয়ের মধ্যে সর্বকনিষ্ঠ তার পিতার নাম মোঃ ইসমাইল ও মাতার নাম নূরজাহান বেগম আল্লাহ তাদেরকে জান্নাত বাসী করুন
শৈশব কাল :- শৈশবে তিনি মাতা পিতার কাছে থেকে সর্বপ্রথম জ্ঞান অর্জন করেন
শিক্ষা জীবন :- হযরত মুফতি সাহেব স্থানীয় সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পঞ্চম শ্রেণী পর্যন্ত লেখাপড়া করেন এবং বোর্ডপরীক্ষায় প্রথম বিভাগ লাভ করেন অতঃপর স্বীয় মাতা ও মাওলানা সাখাওয়াত সাহেব এর অনুপ্রেরণায় আত্মীয়-স্বজনদের প্রবল আপত্তি উপেক্ষা করে তৎকালীন দক্ষিণবঙ্গের বিখ্যাত প্রতিষ্ঠান লাওড়ী রামনগর কামিল মাদ্রাসায় ভর্তি হন৷ তিনি শিক্ষকদের প্রিয় ছাত্রে পরিণত হন এবং তাদের সার্বিক তত্ত্বাবধানে ফাজিল পর্যন্ত অধ্যয়ন করেন৷
তিনি শিক্ষা জীবনে যে ঈর্ষণীয় সাফল্য অর্জন করেন তার সংক্ষিপ্ত বর্ণনা নিম্নরূপ
* দাখিল চাহরাম: 1963 সালে মাদ্রাসা বোর্ডের সম্মিলিত মেধা তালিকায় পঞ্চম স্থান অর্জন *দাখিল: 1 965 সালের মাদ্রাসা বোর্ডের সম্মিলিত মেধা তালিকায় তৃতীয় স্থান অর্জন *আলিম 1967 সালের মাদ্রাসা বোর্ডের সম্মিলিত মেধাতালিকায় প্রথম স্থান অর্জন *ফাজিল:1969 সালে মাদ্রাসা বোর্ডে প্রথম শ্রেণীতে তৃতীয় স্থান অর্জন৷
*মাত্র তিন মাসে পবিত্র কুরআনুল কারীম কারীমের হিফজ সমাপ্তকরণ
* কামিল:মাদারীপুর জেলার বাহাদুরপুর শরিয়াতীয়া আলিয়া মাদ্রাসা থেকে কামিল পরীক্ষার 1971 সালে মাদ্রাসা বোর্ডে প্রথম শ্রেণীতে তৃতীয় স্থান অর্জন
*1972 সালে মনিরামপুর মহাবিদ্যালয় থেকে এইচএসসি পাশ করেন৷
দারুল উলুম দেওবন্দ এ গমন
মুফতি সাহেব তার মুরুব্বি ও মুর্শিদ শাইখুল ইসলাম হুসাইন আহমদ মাদানী রহমাতুল্লাহ আলাইহি এর বিশিষ্ট খলিফা হযরত মাওলানা তাজাম্মুল আলী রহমাতুল্লাহ আলাইহির নির্দেশে উপমহাদেশের সর্বশ্রেষ্ঠ ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয় উলুম দেওবন্দে গমন করেন সেখানে তিনি চার বছর অধ্যায়ন করেন যার বিবরণ নিম্নরূপ৷
*মওকুফ আলাইহি:1973 সালে প্রথম বিভাগে উত্তীর্ণ হন
* দাওরায়ে হাদিস: 1974 সালে দাওরায়ে হাদিসের মেধাতালিকায় চতুর্থ স্থান অর্জন
*তাকমিলে উলুমে দ্বীনিয়াত 1975 সালে মেধাতালিকায় প্রথম স্থান অর্জন
* ইফতা: 1976 সালের তালিকায় প্রথম স্থান অর্জন
অবদান :- রাজনৈতিক ক্ষেত্রে তার অবদান
পাকিস্তান আমলে তিনি তার মুর্শিদ তাজাম্মুল আলী রহমাতুল্লাহ আলাইহির তত্ত্ববধানে জমিয়তের কাজে জড়িত হন হযরত তাজাম্মুল আলী রহমাতুল্লাহ গরুর গাড়িতে করে জমিয়তের নানা প্রোগ্রামে হাজির হতেন হযরতেরসাথি হিসেবে মুফতি স সাহেব দামাত বারাকাতুহুম জমিয়াতের সকল কার্যক্রমে অংশগ্রহণ করতেন
বাহাদুরপুর কামিল মাদ্রাসায় অধ্যয়নকালে জমিয়তে তালাবায়ে আরাবিয়া বাহাদুরপুর শাখার ভিপি নির্বাচিত হন স্বাধীনতাত্তোর বাংলাদেশে শাহ আব্দুল করিম শায়খে কৌড়িয়া ও শায়খুল হাদীস আল্লামা আজিজুল হক রহমতুল্লাহি আলাইহি জমিয়তের সভাপতি থাকাকালীন তিনি খুলনা বিভাগ জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশের নাজিম হিসেবে দীর্ঘদিন দায়িত্ব পালন করেন 986 সালে দারুল উলুম খুলনার শায়খুল হাদিস থাকাকালে দল-মত-নির্বিশেষে এলাকাবাসীর অনুরোধ হযরত আলী রহমাতুল্লাহ আলাইহির নির্দেশক্রমে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে 89 যশোর 5 আসনে জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশগ্রহণ করে বিপুল ভোটে সরকার দলীয় প্রার্থীকে পরাজিত করেন এ নির্বাচনে অংশগ্রহণে সম্পূর্ণ বিনা খরচে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন ৷
বাংলাদেশ একটি বিরল ঘটনা এলাকাবাসী ও জমিয়তের কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দের সাথে পরামর্শক্রমে তিনি জাতীয় পার্টিতে যোগদান করেন পরবর্তীকালে হযরত হাফেজ্জী হুজুর রহমাতুল্লাহ আলাইহির আন্দোলনে যোগদান করলে তিনিও জমিয়াতের সিদ্ধান্তক্রমে খিলাফত আন্দোলনের রাজনীতিতে সক্রিয় হয়ে যান ৷ খেলাফত থেকে জমিয়ত বের হয়ে এলে তিনিও জমিয়তের কর্মী হিসেবে তিনি ও খেলাফত থেকে পদত্যাগ করেন 1988 সালের নির্বাচনে হযরত শামসুদ্দীন কাসেমী রহমাতুল্লাহ আলাইহি এর সরাসরি নির্দেশে মুফতী সাহেব দামাত বারাকাতুহুম জাতীয় পার্টি থেকে নির্বাচন করে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন এ সময় তিনি ধর্ম প্রতিমন্ত্রী অতঃপর সংসদে হুইপের দায়িত্ব পালন করেন ধর্ম প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন কালে হযরত মাওলানা শামসুদ্দিন সহ অন্যান্য নেতৃবৃন্দ জমিয়াতের পক্ষ থেকে পক্ষ থেকে মুফতি ওয়াক্কাস সাহেবকে ইঞ্জিনিয়ার ইনস্টিটিউট বিশাল গণসংবর্ধনা প্রদান করেন নব্বইয়ের দশকে এরশাদ সরকারের পতনের পর আবার সক্রিয় হয়ে ওঠেন জমিয়াতের রাজনীতিতে 1991 সালে আরজাবাদ মাদ্রাসা অনুষ্ঠিত জমিয়াতের জাতীয় কাউন্সিলে তাঁকে সর্বসম্মতিক্রমে জমিয়তের মহাসচিব নির্বাচিত করা হয় এবং কাউন্সিলে হযরত মাওলানা শামসুদ্দিন কাসেমী রহমতুল্লাহি বলেন আমি জমিয়াতের ঝানডা মুফতি ওয়াক্কাসের হাতে তুলে দিলাম তিনি 1991 সাল থেকে 2016 সাল পর্যন্ত অত্যন্ত দক্ষতার সহিত জমিয়তের মহাসচিবের দায়িত্ব পালন করেন জমিয়তকে রাষ্ট্রীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে বিশেষ অবস্থান নিয়ে আসেন গত 11 জানুয়ারি 2018 ইংরেজি জাতীয় প্রেসক্লাবে অনুষ্ঠিত জাতীয় কনভেনশনে হযরত মুফতি সাহেবকে জমিয়তের সভাপতি নির্বাচিত করা হয় আল্লাহ তাড়াতাড়ি আমাদের উপর আরো দীর্ঘায়ু করুক আমিন
শিক্ষা-দীক্ষার ক্ষেত্রে মুফতি মুহাম্মদ ওয়াক্কাসের অবদান৷
মনিরামপুর বাসির প্রতি লক্ষ রেখে 1982 সালে শায়েখের অনুমতিক্রমে জামিয়া ইমদাদিয়া মাদানীনগর মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠা করেন এবং মহিলাদের দ্বীনি শিক্ষার প্রয়োজনীয়তা অনুভব করে 1989 সালে জামেয়ার বালিকা শাখা প্রতিষ্ঠা করেন৷দিন দিন মাদ্রাসা উন্নতি লাভ করতে থাকে 1995 সালে শাখায় দাওরা হাদিস চালু হয় এবং 2003 সালে বালক শাখায় দাওরায়ে হাদীস চালু হয় 2009 সালে দারুল ইফতা খোলা হয় বর্তমান বর্তমান দক্ষিণবঙ্গে সর্ববৃহৎ প্রতিষ্ঠানে রূপান্তরিত হয়েছে এখানে বর্তমানে প্রায় দুই হাজার ছাত্র-ছাত্রী লেখাপড়া করছে৷
মৃত্যু : তিনি ৩১ মার্চ ২০২১ ঈসায়ী রোজ বুধবার রাজধানির একটি হাসপাতালে ইন্তেকাল করেন।
তথ্য দানকারীর নাম :- মুফতি মাহমুদুর রহমান
তথ্য দানকারীর মোবাইল :- 01971701321